তেতুলিয়া সংবাদদাতাঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় রহিমদ্দীন (৮২) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি অবৈধ ভাবে জবরদখল করার অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার (৫ জুন) দুপুরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে জমি দখল ও হামলার এই ঘটনাটি ঘটেছে।

জমি দখলে বাঁধা দেয়ায় ভাড়াটি সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মহিলা সহ ৯ জন সদস্য আহত হয়েছে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিমদ্দীনসহ ৪ জনকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আরিফিন হোসেনের অবস্থা আশঙ্খা জনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ।

আহতরা হলেন, ফকিরপাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিমদ্দীন (৮২), মুক্তিযোদ্ধা রহিমদ্দীনের ছেলে আরিফিন হোসেন (৩৫), হাসিবুলের স্ত্রী মেহেরুন (৩৫), ভেলুপাড়া গ্রামের আফাজ উদ্দীনের ছেলে আল আমিন (২৩), আজিতা বেগম, মোছা: মনজু, লিপি, জাহেদা ও ছালেহা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একই ইউনিয়নের মালিগছ গ্রামের তজিব উদ্দীনের সাথে ফকিরপাড়া গ্রামে ২ একর ৮৩ শতক জমি নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিলো। কোন পরিস্থিতির শিকার না হওয়ার জন্য দুই পক্ষই ওই জমি ফেলে রাখে। এদিকে একাধীক মামলার আসামী ডাকাত ও মলম পার্টির লিডার ভজনপুর এলাকার ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত সমির উদ্দীনের ছেলে তারেক হোসেন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে পুরো জমিটি দখল করার চেষ্টা করে। তাকে বাধা দিতে গেলে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। গত রোববার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় তারেক হোসেন তার ছোট ভাই তালেবুল হোসেনকে সাথে নিয়ে আরো ১৫ জন ভাড়াটে বাহিনী নিয়ে (ভাড়াটিয়ে ডাকাত তেঁতুলিয়ার চৌরাস্তা এলাকার নুর ইসলাম, জগদল খালপাড়া এলাকার সুজন আলী, মালিগছ গ্রামের তজিব উদ্দীনের ছেলে আফিরুল, আজিমুল, অলিয়র, আব্দুল ও অলিয়রের ছেলে মোবারকসহ) পুরো জমি দখল করতে আসে। এক পর্যায়ে তারা জমির আলি বাঁধতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাড়ির উপস্থিত সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে তাদের বাঁধা দিতে জমিতে গেলে তারেকসহ ভাড়াটে বাহিনীর সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোন কিছু বোঝার আগেই তাদেরকে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ পরিবারের নয়জন সদস্য গুরুত্বর আহত হয়। পরে তারা বিষয়টি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানানো হয়। এদিকে আহতের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাদের দ্রুত উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে হাসপাতালে অবস্থান করায় মামলা করতে একটু দেরী হচ্ছে বলে জানানো হয়।

আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রহিমদ্দীন -জানান, ২ একর ৮৩ শতক জমির মধ্য আমার কাছে ২৪ শতক জমি তজিব উদ্দীন নিজেই বিক্রি করে। তজিব উদ্দীন উক্ত ৪০ শতক জমি থেকে ১৬ শতক জমি পাবে। কিন্তু পুরো জমি সে দখলে নিতে মলম ও ডাকাত পার্টির সদস্য তারেকের মাধ্যমে দখলের চেষ্টা চালায়। এর আগে একাধীকবার এই জমির জন্য আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারেক। আমরা কোন দোষ করি নাই। একসময় এই দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে শত্রুদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর এই শেষ সময়ে একটু শান্তিতে ঘুমানোর চেষ্টা করলে দেশের মাঝে, আমাদের মাঝে অবস্থিত শত্রু ডাকাত ও মলম পার্টির সর্দ্দার তারেক আমাদের হত্যার জন্য হামলা চালায়। আমি এ ঘটনায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারেকসহ অপরাধীদের দ্রুত বিচার দাবী করছি।

তার নাতি আহত আল আমিন জানান, তারেক ওই জমি দখলের জন্য সব সময় আমাদের পরিবারের সবাইকে হুমকি দিয়ে আসতো এই জমিতে হাত দিলে আমাদের মেরে ফেলবে। তারেক মূলত একজন ডাকাত, সাথে মলম পার্টির একজন লিডার। তার নামে পুরো জেলাসহ ঠাকুরগাও জেলায় অসংখ্যা মামলা রয়েছে। আমরা বেশী বারাবারি না করার জন্য বিষয়টি এড়িয়ে চলতাম। সে খারাপ কাজে জড়িত থাকায় এলাকায় প্রভাব দেখায়। রোববার দুপুরে হঠাৎ ১৫ জন ভাড়াতে বাহিনী নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসে। আমরা কোন কিছু বুঝতে পারি নি। দাদাসহ আমরা তাদের বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের বাড়ির সবাই গুরুত্বর আহত হয়। আমরা তাদের দ্রুত বিচার দাবী করছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় তারেক খুবই খারাপ ভাবে তার প্রভাব দেখাচ্ছে। সে অনেকের জমি জোর করে দখলে নিয়েছে। অনেককেই হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুত্বর আহত করেছে। এমনটা চলতে থাকলে গ্রামবাসী তার জন্য নিরাপদে গ্রামে বসবাস করতে পারবে না। সে এলাকার মলম পার্টি পেশায় অনেক মানুষের সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে। একই সাথে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই যে কারো জমি দখল করে হামলা চালায় সে। দ্রুত যদি প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে এলাকার যুব সমাজ নষ্টের পাশাপাশি অনেক মানুষের নতুন করে আরো অনেক ক্ষতি হবে। আমরা তার গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া  জানান, খবর পেয়ে পুলিশ টিম ঘটনাস্থল গিয়ে তদন্ত করেছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসে নি।এ বযাপারে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।