স্টাফ রিপোর্টার: দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কথা বলছে দাবি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অন্য যে কোনো সময় থেকে দেশের মানুষ এখন ভালো আছে।
রোববার (৬ মার্চ) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি দেখলাম গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য আর তারেক রহমানের শাস্তির মধ্যে আটকে থাকা রাজনীতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা দেখাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তারা সারা দেশে সমাবেশের আয়োজন করছেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে সবসময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৪০ এর দশকে এক আনায় কয়েক কেজি চাল পাওয়া যেত। তারপরও কিন্তু লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। গত কয়েক দশকে সমগ্র পৃথিবীতে খাদ্যদ্রব্যের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। ভারতে বেড়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তর আমেরিকায় বেড়েছে, ইউরোপে বেড়েছে, যুক্তরাজ্যে বেড়েছে, সমগ্র পৃথিবীতে বেড়েছে। বাংলাদেশেও বেড়েছে, তবে তাদের তুলনায় সে রকম নয়। দেখতে হবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে কি না।
দেশের মানুষ আগের যে কোনো সময় থেকে ভালো আছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন স্লোগান দিয়েছি- শ্রমিকের বেতন হতে হবে সাড়ে তিন কেজি চালের মূল্যের সমান। কারণ তখন একজন শ্রমিক একদিনে যে বেতন পেতেন- তা দিয়ে তিন কেজি চালও কিনতে পারতেন না। যারা তখন কমিউনিস্ট পার্টি করতেন তারাও স্লোগান দিতেন সাড়ে তিন কেজি চালের সমান একদিনে শ্রমিকের মজুরি হতে হবে। আজ একজন শ্রমিক চট্টগ্রামে ৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। আর দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৫০০ টাকার নিচে মজুরি নেই। মোটা চালের কেজি ৪১-৪২ টাকা। সেটা হিসাব করলে একজন শ্রমিক একদিনের মজুরির টাকায় ১২-১৫ কেজির বেশি চাল কিনতে পারেন।
তিনি বলেন, ঢাকাতে একজন রিকশাচালক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক বেলা কাজ করলে এক হাজার টাকা আয় করতে পারেন। তিনি ইচ্ছে করলে একদিন রিকশা চালিয়ে অন্যদিন বসে থাকতে পারেন। বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ২৬০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চারগুণ বেড়েছে। আর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা অন্য আয়ের মানুষেরও। প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ দাবি করেন, আজ গ্রামে হারিকেন দেখা যায় না। হারিকেন আর কুপিবাতি এখন দেখা যায় না। এগুলো ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখতে হয়। গত ১০ বছরে কৃষিতে যে উন্নয়ন হয়েছে, হালের বলদ আর গরুর হাল এখন আর বাচ্চারা দেখতে পায় না, চেনে না। কারণ গরুর হাল নাই, এটাই পরিবর্তন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা এগুলো দেখেও দেখেন না। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ ভালো আছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য কর্মসূচি পালন করছেন।
দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ জানাবো, আজকে দেশ উন্নত হয়েছে, কুড়েঘর এখন কবিতায়, পায়ে চলা মেঠো পথ খুঁজে পেতে কষ্ট। এই যে পরিবর্তন, যে ছেলে ১২ বছর আগে বিদেশে গেছে সে দেশে এসে ঢাকা শহর চিনতে পারে না। গ্রাম চিনতে পারে না। গ্রামের একটি ছেলে আর শহরের ছেলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। এই যে পরিবর্তন এটি শেখ হাসিনার কারণে। তাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা রাজনীতি করেন। তারা মানুষকে অতীতে কিছু দিতে পারেননি। তারা দুর্নীতিতে বার বার চ্যম্পিয়ন হয়েছেন, হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশে সমান্তরাল সরকার তৈরি করেছেন। সব ব্যবসার ওপর টোল বসিয়েছিলেন। এটিই দিতে পেরেছেন তারা, এর বাইরে কিছু দিতে পারেননি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে রূপান্তর হতো। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায় নি, তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশ উন্নত হওয়ার পথকে রোধ করেছে।
তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে ৯২তম। এই দেশ ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছাসসহ জলবায়ু পরিবর্তনের দেশ। কিন্তু বাংলাদেশ আজ ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে পৃথিবীতে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। এটি কোনো জাদুর কারণে নয়, বরং জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজ পৃথিবীতে বাংলাদেশের পরিচয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইমাজিন টাইগার হিসেবে। শেখ হাসিরনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের উদাহরণ। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে অবাক করে দিয়ে বিশ্বের মাথাপিছু জমির পরিমাণ সর্বনিম্ন থাকা সত্ত্বেও খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এগুলো সহ্য হয় না বলে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি বেছে নিয়েছে। তাই নেতাকর্মীদের বলবো তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির চেয়ারম্যান ও দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।