মাহমুদ আহমদ: আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহে আমরা শাবান মাসে প্রবেশ করছি, আলহামদুলিল্লাহ। ইসলাম ধর্মে চন্দ্রমাসের মধ্যে শাবান মাস বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময়। বিশ্বনবি ও রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাস থেকে মাহে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন। এ ছাড়া এ মাস থেকে যেন তার উম্মত কল্যাণমণ্ডিত হতে পারেন সেজন্য তিনি দোয়াও করতেন।
হাদিস পাঠে জানা যায়, শাবান মাস আসার আগেই মহানবি (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান’ (মসনদে আহমদ)। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।
তাই এ মাসকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তা। শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। হজরত রাসূল (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি নফল রোজা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজ আদায় করে মাহে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘মহানবি (সা.) কখনো নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে, তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি মহানবি (সা.) কে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন’ (মুসলিম)। অপর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এত অধিক হারে নফল রোজা আদায় করতেন না’ (বোখারি)।
স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে মহানবি (সা.)-এর স্থান প্রথম হওয়ার পরও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসাবে আগে থেকেই রোজা রাখা শুরু করতেন। বিশ্বনবি (সা.) এ মাসে অধিক হারে নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। এ সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, মহানবিকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনকল্পে শাবানের রোজা উত্তম’ (তিরমিজি)।
মাহে রমজানে দীর্ঘ ৩০টি রোজা পালনের কঠিন কর্মসাধনা সহজভাবে আদায় করার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শাবান মাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কেননা আমরা যদি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শাবান মাসে কয়েকটি নফল রোজা রেখে নেই তাহলে রমজানের রোজা রাখতে আমাদের জন্য অনেক সহজ হবে। এ মাসে বিশেষ কিছু নফল আমল রয়েছে, যা আমল করলে আমরা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি এবং জান্নাত লাভের পথ সুগম হবে। এ ছাড়া মুমিন মুত্তাকিরা বরকতপূর্ণ শাবান মাস থেকেই ইবাদতের একটি রুটিন তৈরি করে নেয় যে, পূর্বের রমজান থেকে আগত রমজানে কী কী নেক আমল বেশি করবে।
হাদিসে এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘মহানবি (সা.)-এর প্রিয় মাসের একটি হলো শাবান। এ মাসে নফল রোজা আদায় করেই তিনি মাহে রমজানের রোজা পালন করতেন’ (আবু দাউদ)।
তাই আমরাও যদি শাবান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদতে অতিবাহিত করি আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করতে শুরু করি, হে পরম দয়াময় আল্লাহ! তুমি আমাকে সুস্থ রাখ, আমি যেন আগত রমজানে আগের তুলনায় অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগি, দানখয়রাত, কুরআন পাঠসহ সব পুণ্যকর্ম অধিকহারে করতে পারি। আমরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহপাকের দরবারে ক্রন্দনরত হয়ে দোয়া করি তাহলে তিনি আমাদের রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
তাই রমজানের কল্যাণ থেকে কল্যাণমণ্ডিত হওয়ার জন্য এ শাবান মাস থেকেই আমাদের রমজানের জন্য পুরো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আর না হয় রমজান চলে আসবে আর মনে মনে ভাবব, হায়! রমজান মাস চলে এলো আর আমি এর জন্য তৈরিই হয়নি।
তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে বরণ করতে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করে নিই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এ বরকতপূর্ণ শাবান মাসের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে নিজেকে পবিত্র মাহে রমজানের জন্য উপযুক্ত করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
(লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট)