মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা দেশ ও প্রবাসে ভাসানীকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেছেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের রাজনীতিকদের ‘আইকনিক নেতা’, নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর মতো নেতা ভারত উপমহাদেশে বিরল। তিনিই একমাত্র নেতা যিনি ক্ষমতার শীর্ষে থাকার রাজনীতি না করে মেহনতি মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন। কুঁড়ে ঘরে থেকে রাজনীতি করেছেন। তিনি সকল ধর্মের উর্দ্বে উঠে সর্বাগ্রে মানবতা আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছেন। ছিলেন ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। তাঁকে নিয়ে দেশ ও প্রবাসে বেশী বেশী গবেষণা হওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে যথাযথ সম্মান জানাতে হবে। এজন্য সবাইকে কাজও করতে হবে।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’র ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্তস কথা বলেন। সভায় গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় মওলানাকে স্মরণ করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। স্মৃতিচারণ করেন মওলানা ভাসানীর সান্নিধ্য পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফাউন্ডেশন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে এই সভার আয়োজন করে। ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলী ইমামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন কানাডা প্রবাসী ভাসানী গবেষক ড. আবিদ বাহার এবং কলকাতার ভাসানী চর্চ্চা কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসিফ আক্রাম। সভা পরিচালনা করেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের।
সভার শুরুতেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও ভিডিও শো-তে মওলানা ভাসানীকে তুলে ধরা হয়। প্রকাশ করা হয় স্মরণিকা।
সভায় সাপ্তাহিক জনমভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার,সাঃবাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের ও সাঈদ তারেক, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ড. মাহফুজ চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক ফখুরপল আলম,সাবেক এমপি লুৎফর রহমান চৌধুরী হেলাল, আমেরিকান প্রেসক্লাব অব বাংলাদেশ অরিজিন-এর সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক এবং মুলধারার রাজনীতিক হাকিকুল ইসলাম খোকন ,মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হারিস উদ্দিন আহমেদ, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, আমেরিকান প্রেসক্লাব অব বাংলাদেশ অরিজিন-এর সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন,সাঃদেশ সম্পাদক মিজানুর রহমান,অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, এডভোকেট মজিবুর রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মাহাতাব উদ্দিন, এবিএম ওসমান গনি, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, কিউ জামান, শাহ আলম দুলাল, ফরহাদ হোসেন, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম – বাংলাদেশ ( জেএসএফ)”র সংগঠক হাজি আনোয়ার হোসেন লিটন, ফারুর হোসেন মজুমদার ,বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধক্ষ মফিজুল ইসলীম ভুইয়া রুমি,সদস্য জাহীংগীর শহীদ সোহরাওয়ারদী,নিরা রাববানী নিরু,আমীন খান জাকির, ডা. নার্গিস রহমান, কাজী ফৌজিয়া, শামসুন্নাহার নীরা, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিউইয়র্কের সদস্য সচিব আহমেদ সোহেল,দেলোয়ার হোসেন শিপন ও আব্দুল কাদের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় বক্তারা বলেন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারত উপমহাদেশের মজলুম জননেতা খ্যাত অন্যতম রাজনীতিবিদ। ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি। বক্তারা বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা, আপসহীন নেতা। যার কাছে ধনী-গরিব কোন কিছুই ভেদাভেদ ছিলনা। বক্তারা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মওলানা ভাসানীর মতো নেতার বড় প্রয়োজন উল্লেখ করে বলেন, দেশে ‘খামোশ’ বলার মতো নেতার দরকার। তিনি সব সময় ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতেন। ক্ষমতার কাছে থাকলেও ক্ষমতার মোহ তাকে কখনো আবিষ্ট করেনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন নির্মোহ, অনাড়ম্বর ও অত্যন্ত সাদাসিধে। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি শোষণ ও বঞ্চনাহীন, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে মওলানা ভাসানীর সঠিক ইতিহাস পৌঁছানো না হলে ভবিষ্যতে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ার সম্ভাবনার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন কোন কোন বক্তা।
মওলানা ভাসানীকে !বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর অবদান জাতির কাছে চিরদিন অবিস্মরণীয় করে রাখার জন্য পাঠ্যবইতে সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। পাশাপাশি সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সর্বস্তরে ভাসানীকে তুলে ধরতে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রতি দাবী জানানো হয় সভায়।
সভায় ড. আসিফ আক্রাম ‘রবুবিয়াত : এ র্যাডিক্যাল অ্যাপ্রোচ টু ইসলামিক সোস্যালিজম’ শীর্ষক মূল বক্তব্যে ‘অনেকের ধারনা ভাসানী ছিলেন বামপন্থী বা মুসলিমবিরোধী, আসলে কি তাই’- এমন প্রশ্ন করে বলেন, ভাসানীর রাজনীতি ছিলো গণ মানুষের জন্য রাজনীতি। তাঁর দর্শন ছিলো ইসলাম আর সমাজতন্ত্রের সন্নিবেশন। মওলানাকে বুঝতে হলে তাঁর রবুবিয়াত সম্পর্কে জানতে হবে, পড়তে হবে। এজন্য বেশী বেশী গবেষণার দরকার।
ড. আবিদ বাহার বলেন, মওলানা ভাসানীকে বুঝতে হলে তাঁকে জানতে হবে, চিনতে হবে। আর এজন্য মওলানাকে নিয়ে দেশ ও প্রবাসে বেশী বেশী গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি মওলানাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সবাই মিলেই এই কাজ করতে হবে। বক্তারা বলেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতিকদের গুরু। তার রাজনীতি, দর্শন বুঝতে হলে তাঁকে নিয়ে আরো গবেষনার প্রয়োজন। এজন্য দেশ ও প্রবাসে আরো বেশী করে মওলানাকে জানতে ও জানাতে গবেষনার পাশাপাশি বেশী বেশী সভা-সমাবেশ, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার আয়োজনের উপর বক্তারা গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা বলেন, মওলানা ভাসানীকে সত্যিকারার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাঁকে ও তার আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মাঝে মওলানাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে এজন্য কাজ করতে হবে। সভা শেষে সবাইরে নৈশ ভোজে আপ্যায়ন করা হয় ।