তিন কোটি টাকার চেক দিয়ে ডিসি পদায়নের খবরটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এককথায় বলে দিতে পারি, ভুয়া একটি বিষয়কে জাতীয় পর্যায়ে এনে মানুষকে বিব্রত করা হয়েছে। এতে কেউ ছোট হয় না, দিন শেষে যারা এটা করেছে তারাই ছোট হয়েছে। এমনটি জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। এদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে ১৭ জন উপ-সচিবকে শাস্তির সুপারিশ করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি বলে জানান তিনি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সম্প্রতি কালবেলা পত্রিকা একটি বড় ধরনের গুজব ছড়িয়েছে। ছবি দিয়ে একেবারে ভাইরাল নিউজ করেছে। এ ব্যাপারে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, একটা খবর দেওয়ার আগে ভেরিফিকেশন করা। এটা কিছুই ছিল না। একটা ভুয়া খবর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ধরনের একটা খবর ছাপিয়ে আপনাদের সম্পর্কে একটি প্রশ্ন এসে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এখানে কী ছিল? একজন, উনার নাম মির্জা সাবেদ আলী। একটা ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন পদ্মা ব্যাংকে। ২০০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্টটি খুলেছিলেন ২০২৩ সালে। যেদিন তদন্ত করা হয় সেই অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স ছিল জিরো টাকা। কোনও টাকাই নেই।
‘এই ধরনের নিউজ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে কী লাভ? এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ব্যাংকের যিনি ম্যানেজার ছিলেন ফর্ম পূরণ না করে তার অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছিল। যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সে ঠিকানায় সে আদৌ থাকে না। সেই লোকের ওইদিন থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যে তিন কোটি টাকার চেক দিতে পারে সে কি এত হালকা হবে?
সিনিয়র সচিব বলেন, এককথায় বলে দিতে পারি, ভুয়া একটি বিষয়কে জাতীয় পর্যায়ে এনে মানুষকে বিব্রত করা হয়েছে। এতে কেউ ছোট হয় না, দিন শেষে যারা এটা করেছে তারাই ছোট হয়েছে।
মোখলেস উর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা অনুরোধ করবো সমস্ত ব্যাংকে যেন নির্দেশনা দেয়, এটা আছে তবু আবার নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে কী কী নিয়ম মানা হবে। আর এই ধরনের একটা ফেক লোক এত বড় একটি ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে, এ ব্যাপারে তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করছি।
সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে রিকোয়েস্ট লেটার দেবো, এই মন্ত্রণালয় যাতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়।
অপরদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করায় ১৭ জন উপ-সচিবকে শাস্তির সুপারিশ করে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, গত ১০ই ডিসেম্বর আমাদের মন্ত্রণালয়ে একটি আনরেস্ট (অসন্তোষ) পরিস্থিতি হয়েছিল। সেটার জন্য এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এটার প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদ। কমিটির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সাক্ষী-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ১৭ জনকে তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ৩টি পর্যায়ে তিনি সাজেস্ট করেছেন কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ৮ জনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেয়া যেতে পারে। ৪ জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি-বিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেয়া যেতে পারে। অন্য পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি তিরস্কার দেয়া যেতে পারে। তাদের সাবধান করা হবে যেন ভবিষ্যতে এমনটি না করেন।
তিনি বলেন, এটা আমাদের ফাইন্ডিংস। একজন সরকারি কর্মকর্তা যখন এ বিষয়গুলো ফেস করেন তখন অনেকগুলো স্টেজ আছে। সেগুলো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা পর্যায়ে দেখা যায় অনেকের সংশ্লিষ্টতা ছিল। আবার অনেকের ছিল না। আবার অনেক সময় দেখা যায় নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এ রকম হলে অনেক সময় আমরা সেগুলো দেখি বলে জানিয়েছেন সচিব মোখলেস উর রহমান।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতি ও সাধারণ মানুষ জানতে চায়। আমি ডিসি হতে পারিনি সেজন্যই এরকম একটা আন্দোলন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে, এটা কেউ ভালোভাবে নেয়নি। আমাদের সিনিয়র কলিগরা নেয়নি। আমাদের জুনিয়র কলিগরা নেয়নি। সর্বোপরি আপনারা নেননি এবং সত্যি কথা বলতে কি জনগণও ভালোভাবে নেয়নি।
সিনিয়র সচিব বলেন, অনেকে বলছে এগুলো যদি কঠোর হস্তে দমন না করেন, ব্যবস্থা না নেন, আমাদের প্রশাসন ভেঙে পড়বে। শৃঙ্খলা থাকবে না। প্রশাসনের একটি বড় দিক হলো শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যা যা করার আমিও আইনের ঊর্ধ্বে না আপনারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী গুরু এবং লঘুদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জড়িত কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন কেউ আছেন কিনা- জানতে চাইলে মোখলেস উর রহমান বলেন, একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন। তাকে এরই মধ্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার করে বদলি করা হয়েছে। তিনি কিছু ওভার অ্যাক্ট করেছিলেন। এজন্য সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা অ্যাক্ট করবো তবে ওভার অ্যাক্ট করতে পারি না।
১৭ জনের সবাই উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জানিয়ে তিনি বলেন, এ কর্মকর্তাদের কারও নাম জানার দরকার নেই। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সম্প্রতি ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়।
ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী উপ-সচিব পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা গত ১০ই সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান। কর্মকর্তাদের এমন ক্ষোভ প্রকাশ ও হট্টগোল এর আগে সচিবালয়ে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা।
নিউজ /এমএসএম