শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩২ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানচালের লক্ষ্যে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা

সংবাদদাতার নাম :
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২
  • ১৬৩ এই পর্যন্ত দেখেছেন

দেওয়ান রফিকুল হায়দারঃ বিএনপি’র মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ”শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়” এই এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি শুরু করেছেন তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন দলের সাথে আলাপ আলোচনা। এ খবর এখন দেশ বিদেশে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অনলাইন টিভি এসব প্রচার মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেদের তো কোমরের জোর নেই সুতরাং ছোট ছোট এসব দলকে একত্রিত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে যদি একটি বৃহত্তর ”ঐক্য” গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা করা। তার মতে, এই ঐক্য গড়ে তুলতে পারলেই যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে হঠানো সম্ভব। কি অবাক চিন্তাধারা জনাব ফখরুল ইসলামের।

১৯৯১ বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞ আইনজীবি যিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচয়িতা গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি দল নিয়ে ”জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট” নাম দিয়ে বিএনপি নির্বাচন করে হেরে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে যে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছিলো নিশ্চয়ই তা ভুলে যাননি জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তিকে অভিভাবক বানিয়েও তারা কোন ফায়দা হাসিল করতে পারেন নি। এক সময়ে তাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়া যখন পুরোপুরি বিএনপি’র নেতৃত্বে ছিলেন তখন তিনি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলেন যে জনগণই ক্ষমতার উৎস। আর সে কারণেই তিনি গ্রামে গঞ্জে গিয়ে মানুষের সহানুভুতি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার ফলশ্রুতিতে তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য হলো, তাঁর শেষবারের মতো প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে অভিশাপ হয়ে উঠেছিলেন তার স্বনামধন্য পুত্র তারেক রহমান।

সে সময় তারেক রহমানের হাতে ছিলো হাওয়া ভবনের কর্তৃত্ব, আর মা (প্রধানমন্ত্রী) ছিলেন তার তাবেদারের মতো। পুত্রের কথা মায়ের শুনতেই হতো। তখন রাজনীতির দিকে মন না দিয়ে বরং বিভিন্ন ভাবে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন তারেক রহমান। এর ফলে জনগণ থেকে তারা ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকেন। এখন বিএনপি জনগণের সাথে ’সম্পর্কহীন’ একটি দলে পরিণত হয়েছেন। বর্তমানে নেতৃত্বহীন বিএনপি’র বাংলাদেশে যে দু’জন নাম মাত্র নেতা আছেন তার একজন ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্যজন রুহুল আলম রিজভী তাদের পক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতাই লন্ডনে অবস্থানরত পলাতক আসামী তারেক রহমানের হাতে। তাঁর নির্দেশেই বর্তমান নেতাদের ওঠাবসা করতে হয়। সুতরাং ’কোমর ভাঙ্গা’ বিএনপি যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলে তাদের আন্দোলন যে গতিশীল করতে পারবেনা তা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি সমাজ সহ সাধারণ জনগণও ভালো করেই বুঝে।

জানা গেছে, বিএনপি এখন যে দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করছে সে সব দলগুলো একত্রিত হওয়ার আগেই জানতে চেয়েছে সম্মিলিত জোট গঠন করা হলে, জোটের নেতা কে হবেন? এ নিয়ে ভীষণ বিপাকে আছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপায়ান্তর না দেখে আলমগীর নাকি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াই হবেন নেতা! অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, বেচারীর শারীরিক যে অবস্থা কখন কি হয় এ নিয়ে সবাই যখন শঙ্কিত তখন আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোট গঠন করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোটের নেতা বানানো হলে তা হবে বেগম খালেদার জন্য চরম অবমাননা।

তা ছাড়া জিয়া অরফেনাজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় দুই বছর জেল খেটে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্ত রয়েছেন খালেদা জিয়া। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে পারবেন না। দুর্নীতি মামলা সাজা হওয়ায় তিনি নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না।

অবশ্য বিএনপি’র মহাসচিব বলেছেন, ঐক্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়ে কোন জটিলতা হবেনা। তার বক্তব্য হচ্ছে, ”অন্য দলগুলোর সাথে যেহেতু আমরা আছি, তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ঐক্যের নেতা ঠিক হবে।”

বিবিসি ডট কম এর খবরে বলা হয়েছে, ”বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও বিএনপি এখন কৌশল হিসেবে তার নেতৃত্বকেই সামনে রেখে এগুতে চাইছে। এর ফলে খালেদা জিয়ার মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক একটা অবস্থান তৈরী করা সম্ভব হতে পারে এবং একই সাথে তাদের আন্দোলনে মানুষের সহানুভুতি পাওয়া যেতে পারে বলে দলটির নেতাদের অনেকেই মনে করেন।” অর্থাৎ তাদের চিন্তাধারা হচ্ছে, ”এক ঢিলে দুই পাখি মারা।”

বিএনপি’র অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তারা আসলে খালেদা জিয়ার নামেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চাইছেন। সেখানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নীতি নিয়ে তৎপর থাকবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করবেন। ”

এখন দেখা যাচ্ছে, সম্মিলিত জোট গঠন করার আগেই বিএনপি সারা দেশে মিছিল, মিটিং করে দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এই অরাজকতা সৃষ্টি করার আরেকটা কারণ হতে পারে, আগামী ২৫শে জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের স্দ্ধিান্ত নেয়া হয়েছে এবং আশা করা হয়েছে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ উপস্থিত থেকে তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাবে। মূলত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে পদ্মার উভয় পাড়ের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেছে। সুতরাং এতো মানুষ যাতে উদ্বোধনী দিনে ওখানে না যায়, সে লক্ষ্যে তারা মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অরাজকতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করা।

বিএনপি’র উচিৎ ছিলো পদ্মা সেতু যখন হয়েই গেছে, এখন জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠনটি কি ভাবে সুন্দর করে সফল করা যায় তার জন্য সহযোগিতা করা। তা না করে উল্টো পথে হাঁটছে তারা ! কথায় আছে ”ইল্লত যায়না মইলে, খাসলত যায়না ধুইলে” অর্থাৎ যার যে অভ্যেস তা কখনো যায়না। বিএনপি গঠনের পর থেকেই তাদের যে অভ্যেস তা কখনো ছাড়তে পারবে না, এ কথা বাংলাদেশের মানুষ ভালো করেই জানে। তারপরও আমি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাবো, পদ্মা সেতু’র উদ্বোধনী দিনে বিএনপি নেত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা এবং তাঁকে সাথে নিয়ে পদ্মার ওপর পাড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। এ কাজ করতে পারলে আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী ছোট হবেন না বরং জনগণের কাছে তার মান-মর্য্যাদা আরও বাড়বে। এ ব্যাপারে একটু চিন্তা ভাবনা করার জন্য অনুরোধ রইলো।

অন্য এক খবরে দেখলাম, ছাত্রলীগ বিএনপি’র মিছিল মিটিংয়ের প্রতিবাদ করে তারাও পাল্টা মিছিল মিটিং শুরু করেছে। এই খবর দেখে আমার কাছে বেমানান লাগছে। কারণ ছাত্রলীগের কর্মীরা যদি তার প্রতিবাদ বিএনপি’র মতোই করে তাহলে তার অর্থ হলো তাদের প্রতিবাদকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেয়া। ছাত্রলীগের কর্মীরা বা আওয়ামী লীগ কি বুঝতে পারেনা যে, বিএনপি’র এসব মিছিল মিটিং শুধু মাত্র ’শহর কেন্দ্রীক’। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজনটা কি? চুপ থাকলেই তো হয়, দেখা যাক না কোথাকার পানি, কোথায় গড়ায়?

লেখকঃ দেওয়ান রফিকুল হায়দার ( দেওয়ান ফয়সল). সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, কলামিষ্ট, সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102