ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজমে মাস্টার্স শেষ করার পর বন্ধু জুয়েল অজ্ঞাত কারনে আত্মাভিমানী হয়ে নিজ ঘরে নির্বাসিত জীবন যাপন শুরু করে। বই আর পত্রিকা ছিলো তাঁর জীবন সঙ্গী।
তাঁর পরিবার ছিলো ছাতকের স্বচ্ছল খ্যাতিমান পরিবার। সে চাইলে বিলাসী জীবন যাপন করতে পারতো। তা না করে সে বই আর পত্রিকার মধ্যে নিমজ্জিত হলো। নিজেকে নিজ ঘরে বন্দি করে ফেললো।খাওয়ার প্রাচুর্য ছিলো, কিন্তু খুবই অল্প খেতো। ফ্যান ছিলো, ফ্যান চালাতো না। জীবনধারণের জন্য ন্যুনতম উপাদান ব্যবহার করতো। কদাকঞ্চিৎ ঘরের বাইরে যেতো। বের হয়ে দু’একজন ঘনিষ্ঠ জনের সাথে ফোনে কথা বলে ফিরে আসতো। কখনো বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা থাকলে দেখতে কখনো বাইরে যেতো। দু’তিন সপ্তাহে একবার হয়তো বের হতো। পথে কারো সাথে দেখা হলে তাকে কিছু না কিছু খাওয়াতো আর বই ও পত্রিকা পড়ার উপদেশ দিতো। দু’তিন মাসে একবার তাঁর ফোন পেতাম। রেডি থাকতাম তাঁর কল দীর্ঘক্ষণ ধরে চলবে, ঘন্টা দু ঘন্টা। খুঁটে খুঁটে বাচ্চা কাচ্চা ভাই বোন সবার খবর নিতো। বিভিন্ন জ্ঞানের টপিক নিয়ে কথা হতো।
সে ছিলো যেনো জ্ঞানের চলমান বিশ্বকোষ। আমাকে আমার গানের বিষয়েও পরামর্শ দিতো। দীর্ঘক্ষণ কথা হলেও বিরক্তি লাগতো না। সে আমার এতই অন্তরঙ্গ ছিলো যে আমার জীবনের প্রতিটি ইভেন্ট এমনকি আমার ভাইবোনদের জীবনের ইভেন্টগুলো সে মনে রাখতো। আমাকে বলতো আমি নাকি সেরা মেধাবী একজন লোক। আমাকে নিয়ে সে গর্ব করতো। আমাকে উৎসাহ দিতো। আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলো পিএইচ ডি করতে। সে জানতো আমি ভালো থিসিস প্রণেতা। কয়েকজনের পিএইচ ডি থিসিস লিখে দিয়েছিলাম বলে।
তাঁকে তার আত্মাভিমানী জীবন থেকে বের করার জন্য আমরা বন্ধুরা কম চেষ্টা করিনি। অনেক চেষ্টা করেছেন খালাম্মা। কাঁদতে কাঁদতে খালাম্মা চলে গেলেন পর পারে। মানিক ভাই, মুজিব ভাই অনেক চেষ্টা করেছেন তাঁর মান ভাঙ্গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে। প্রথম প্রথম ছিলো আত্মাভিমান,পরে তা থেকে Irreversible psychosis হয়ে যায়। সে দুনিয়ার তাবৎ কিছু বুঝতো, খবর নিতো, পরামর্শ দিতো। কিন্তু নিজেকে আত্মবন্দী দশা থেকে বের করতো না। অবশেষে আত্মবন্দী দশা থেকে বের হলো আজ, তবে তা অনন্ত কালের পথে যাত্রা শুরু করার লক্ষ্যে। ইয়া আল্লাহ, জুয়েলকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসাবে কবুল করো। আমিন।
উল্লেখ্য মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল বুধবার (০১মে ) সকাল ১০ ৩০ ঘটিকার সময় ছাতক শহরের মন্ডলীভোগ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৫৬ বছর।
[আত্মবন্দী দশায় থাকাকালীন সে ছবি উঠাতো না। এই এই ছবিটি ১৯৯৫ সালের ১১ ই মার্চের, যেদিন আমার বিয়ের আকদ হলো]