ইসলাম হলো সত্য ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। মানবতার মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসাবে এ ধর্মের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন রাসূল (সা.)। আইয়ামে জাহেলিয়াতের সব কুসংস্কার অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারকে বিনাশ করে ইসলামের আলো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক মহান দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শ্রেষ্ঠ নবি হিসাবে দুনিয়ায় পাঠালেন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে।
বিশ্বনবি (সা.) বলেছেন, যে কাজ আল্লাহর নামে আরম্ভ করা না হয়, তা লেজকাটা, এর পরিণাম শুভ ও কল্যাণময় হয় না। আমরা যে কোনো ভালো কাজ শুরু করব আল্লাহর নামে, অর্থাৎ বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করব। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি সম্পর্কে ভালো জানেন। সেভাবেই তিনি স্বীয় রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে দ্বীনের নির্দেশাবলি প্রদান করেছেন। দিন যতই যাচ্ছে, রাসূল (সা.)-এর প্রদত্ত সেই নির্দেশনার প্রতি স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সমর্থন বেড়েই চলেছে।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে রাসূল (সা.)-এর আদেশ ও নিষেধ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তাতে সেগুলো স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যথোচিত প্রমাণিত হয়েছে। এভাবে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতগুলো সারা পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর প্রমাণ করছে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান। এ সম্পর্কে নিম্নে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে-
পুরুষের টাখনুর ওপরে কাপড় পরতে হবে
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের জন্য পায়জামা, লুঙ্গি বা কোনো পরিধেয় কাপড় পায়ের টাখনুর ওপরে পরতে হবে। টাখনুর নিচে পড়া যাবে না। অন্যথায় সে অংশ জাহান্নামে যাবে।’ (সহিহ বোখারি ৫৩৭১)। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, পুরুষের টাখনুর ভেতর প্রচুর পরিমাণে হরমোন থাকে এবং সেগুলোর আলো ও বাতাসের প্রয়োজন হয়। তাই কোনো পুরুষ যদি টাখনুর ওপরের অংশ খোলা না রেখে ঢেকে রাখে, তাহলে তার যৌনশক্তি কমে যাবে এবং সে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে।
ভ্রু প্ল্যাগ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা : রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ভ্রু প্ল্যাগকারীদের ওপর আল্লাহতায়ালা লানত করেন’ (সহিহ বোখারি ৫৫১৫)। এ সম্পর্কে বিজ্ঞান বলে, ‘ভ্রু হলো চোখের সুরক্ষার জন্য নিয়ামক। ভ্রুতে এমন কিছু লোম থাকে, যদি তা কাটা পড়ে যায়, তাহলে ভ্রু-প্ল্যাগকারী পাগল হয়ে যেতে পারে অথবা সে মৃত্যুবরণও করতে পারে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণালংকার ব্যবহার নিষিদ্ধ : রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা উম্মতের পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম করেছেন’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-১৬৫৫)। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, স্বর্ণ এমন একটি পদার্থ যা পুরুষের চামড়ার সঙ্গে মিশে রক্তে মাধ্যমে ব্রেনে চলে যায়। আর তার পরিমাণ যদি ২৩ হয়, তাহলে মানুষ তার আগের স্মৃতি সব হারিয়ে ফেলবে।
বাতি নিভিয়ে ও ডান কাতে ঘুমানোর নির্দেশ : রাসূল (সা.) বলেন, ‘ঘুমানোর সময় আলো নিভিয়ে এবং ডান কাত হয়ে ঘুমাবে’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-৩২৮০)। এ সম্পর্কে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, ডানকাত হয়ে ঘুমালে হার্ট ভালো করে পাম্প করে। আর লাইট না নিভিয়ে ঘুমালে ব্রেনের অ্যানাটমি রস শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে ক্যানসার হওয়ার খুব সম্ভাবনা থাকে।
পুরুষরা দাড়ি বড় রাখবে এবং গোঁফ খাটো করবে রাসূল (সা.) পুরুষদের বলেছেন, ‘তোমরা গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা রাখ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৪)। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান বলে, পুরুষরা দাড়ি না রাখলে স্কিন ক্যানসার, ফুসফুসের ইনফেকশন এবং ৪০-এর আগে যৌবন হারানোর সম্ভাবনা থাকে। আর গোঁফ বড় করলে তা স্কিনে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং এতে ত্বক সংক্রমিত হয়।
অশ্লীলতা, অপকর্ম ও নেশা করা কঠিন পাপ : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ, অযাচিত কর্ম ও মন্দ পথ।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং-৩২)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নেশাগ্রস্ততা শয়তানের কাজ’ (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং-৯০)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘নেশা উদ্রেগকারী দ্রব্য খাওয়া হারাম’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-৬১২৪)। এ মর্মে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বলে, নেশাজাতীয় দ্রব্য ও ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসার, ব্রংকাইটিস ও হৃদরোগ হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে। এতে যৌনশক্তি ও ক্ষুধা কমে যায়। এমনকি স্মৃতিশক্তিও কমে যায়।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান আরও বলে, পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল কর্ম, মাদকদ্রব্য-নেশা প্রভৃতিতে যদি কেউ জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার ব্রেনের ফরেন্টাল এরিয়া পরিচালনা করার ইনটেলেকচুয়াল সেলগুলো থরথর করে কাঁপতে থাকে এবং অস্থির হয়ে যায়। যার ফলে সে অসুস্থ জীবন পরিচালনা করে। আর এগুলো ক্রমশ তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এভাবেই ইসলামের বিভিন্ন বিধানের মাধ্যমে যাবতীয় কল্যাণ ও উপকারিতা মানবজীবনে সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়। এমনিভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধানই কল্যাণকর বলে প্রমাণতি। বিশ্বনবি (সা.) সুন্নত মানলে শুধু সওয়াব হবে তা নয়। বরং উনার প্রত্যেকটা কথাই বিজ্ঞানসম্মত। ইসলামি নিয়ম মানুন, সুস্থ থাকুন।
নিউজ /এমএসএম