বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ অপরাহ্ন

ভিশন-মিশন বিভ্রাট

ড. মীজানুর রহমান
  • খবর আপডেট সময় : শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২১৯ এই পর্যন্ত দেখেছেন

ভিশন এবং মিশনের কেতাবি সংজ্ঞাগুলোতে যা লেখা আছে এর সারমর্ম হচ্ছে ভিশন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের “ভবিষ্যৎ”, মিশন হচ্ছে “বর্তমান”‌। ভিশন হচ্ছে কেন এই প্রতিষ্ঠান, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি কোথায় যেতে চায়? মিশন হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বা এখন যা করছে। ভিশন হচ্ছে Why? আর মিশন হচ্ছে What , Who, এবং How?। ভিশন হচ্ছে ফল(effect) , আর মিশন হচ্ছে কারণ(cause)। ( যারা বই বা ডিকশনারি পড়ে এই শব্দগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁদের জন্য এ লেখা লিখছি না। এই শব্দগুলোর ব্যবহার নিয়ে যারা আমার মত কিছুটা হলেও কনফিউজড তাঁদের জন্য এই লেখা) ।

এক ডাকসাইটে প্রধান নির্বাহী সুযোগ পেলেই কোম্পানির কর্মকর্তাদের সবসময় কোম্পানির ভিশন-মিশনকে পাথেয় করে কাজ করতে পরামর্শ দেন। সেই কর্মকর্তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক ছাত্র বৈকালিক এমবিএ ক্লাসে আমাকে এই শব্দ যুগলের পার্থক্য জিজ্ঞেস করে এবং তাঁদের প্রধান নির্বাহীর প্রতিদিনের নসিয়তের কথা বলে। আমি বললাম আপনি কি কখনো ওই নির্বাহীকে জিজ্ঞেস করেছেন, ” স্যার, এই শব্দ দুইটার মধ্যে পার্থক্য কি?” আমি আপনার এই প্রশ্নের জবাব নেক্সট ক্লাসে দিব। এর আগে আপনি আপনার স্যারকে এই দুই শব্দের পার্থক্য জিজ্ঞেস করে আসবেন। পরবর্তী ক্লাসে আমি ওই ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলাম, ভিশন মিশনের পার্থক্যের ব্যাপারে আপনার স্যার কি বলেছে? ছাত্রটি বলল কিছুই বলেননি। আমাকে অনেকক্ষণ বকাবকি করেছেন। বলেছেন, “এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য জানো না? তোমাদের লেখাপড়া বলতে কিছু নেই। ইংরেজিতো দেখছি কিছুই শিখোনি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুধু পলিটিক্স, পড়ালেখা ওখানে কিছুই হয়না না । আমাদের সময় এটা ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড, ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায় পাঁচ মিনিট আমার অজ্ঞতা নিয়ে বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।”

আমি নিশ্চিত ওই নির্বাহী নিজেও কনফিউজড ছিলেন দুই শব্দের পার্থক্যের ব্যাপারে। পাঠকদের অনুরোধ করবো, ডিকশনারিতে “ভিশন- মিশন- লক্ষ্য-উদ্দেশ্য -টার্গেট” এই পাঁচটি শব্দের অর্থ দেখতে। সবকটি শব্দের আক্ষরিক অর্থ লিখলে আপনিও কনফিউজড হবেন। একটার সাথে অন্যটার পার্থক্য নির্ণয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন।

আশির দশকের শুরুতে আইবিএ-তে ড.আলিমুল্লাহ মিয়ান এর “সেন্টার ফর পপুলেশন ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিসার্চ” এ তিন সপ্তাহের একটা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছে। প্রশিক্ষক ছিলেন ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট’ এর অধ্যাপক অ্যানথিনিও লোপেজ, যিনি ছিলেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের গ্রাজুয়েট। তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ চলাকালে তাঁর সাথে ভালো রকমের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। প্রোগ্রামের বাইরেও তাঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সে আমাকে বলেছিল ছাত্ররা যদি “ভিশন-মিশন-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-টার্গেট’ এর পার্থক্য বুঝতে না পারে, তাহলে পাঁচটি শব্দ খাতায় লিখে দিবে, তাহলে সহজেই বুঝে যাবে। এই বলে সে আমার খাতার পাতায় পাঁচটি শব্দ লিখে দিল। প্রথম শব্দটির কোন অক্ষর চেনা যাচ্ছিল না এবং কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না , একেবারেই অস্পষ্ট। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি লিখলে ? সে বলল, “এটা হচ্ছে vision ” , তারপরের শব্দটির প্রথম অক্ষরটি ‘m’ এর মত, আর বাকি কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না‌। তবুও শব্দের আদ্যাক্ষর ‘m’ দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম এটা মিশন(mission) হতে পরে। ছোট হাতের অক্ষরে পেঁচিয়ে goal শব্দটি লিখলেন, সবগুলো অক্ষর ফুটবলের মত গোলাকৃতির হলেও একটু কষ্ট হলেও পড়া গেল। তার পরে লিখলেন স্পষ্টকরে O b j e c t i v e, এবং সর্বশেষ সবকটি অক্ষর ক্যাপিটাল লেটার ব্যবহার করে লিখলেন ‘TARGET’ । প্রত্যেকটা শব্দের চেয়ে এর পরবর্তী শব্দটি সুস্পষ্টভাবে আমার খাতায় প্রতিভাত হচ্ছিল। তখন তিনি আমাকে বললেন, “এই হচ্ছে শব্দ পাঁচটির মধ্যে পার্থক্য । একটা থেকে পরেরটা স্পষ্টতর। প্রথমটা একেবারেই কাব্যিক এবং রোমান্টিক, আর সর্বশেষটা একেবারে সুনির্দিষ্ট গাণিতিক বাস্তবতা।”

পুরনো ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের পশু হাসপাতালের অনতিদূরে এক ইঁদুর মারার কল তৈরীর কারখানার মালিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, বঙ্গবন্ধুর ভীষণ ভক্ত, তাঁর সাইনবোর্ডে কারখানার নাম ‘মেসার্স মাউস ট্রেপ লি:’ এর নিচেই লিখলেন, ” জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা আমাদের ভিশন”‌ । অনেকেই তাঁর লেখা নিয়ে তিরস্কার করতে লাগলো। কেউ কেউ বলল, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সে এমনটি লিখেছে, ভবিষ্যতে সে ওয়ার্ড কমিশনারের নমিনেশন চাইবে। কেউ বলল চাঁদাবাজির হাত থেকে বাঁচার জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি অ্যানথিনিও লোপেজের ব্যাখ্যা ধরে বিশ্লেষণ করে দেখলাম সে তো ঠিকই লিখেছে। জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা একটি বহুমাত্রিক বিমূর্ত ধারণা (ভিশন)। স্বপ্নের সোনার বাংলায় হয়তো অনেক কিছুই থাকবে, আবার থাকবেও না। কিন্তু ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকবে না, এটা নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন । তাহলে একটু স্পষ্ট করে বললে দাঁড়ায় “ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ” (মিশন)।

ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করতে হলে খাদ্যের পর্যাপ্ততা বাড়াতে হবে (লক্ষ্য )। খাদ্যের পর্যাপ্ততা বাড়ানো যেতে পারে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে অথবা খাদ্যের অপচয় কমিয়ে। খাদ্যের অপচয় কমিয়ে খাদ্যের পর্যাপ্ততা বাড়ানো সম্ভব (উদ্দেশ্য)। প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রচুর খাদ্য অপচয় হয়। আমাদের দানাদার শস্যের ৭% ইঁদুরে খেয়ে ফেলে। আমাদের বর্তমানে দানাদার খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি মেট্রিক টন। এর অর্থ হচ্ছে প্রতিবছর ইঁদুরে খায় ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রকৃতপক্ষে মাঝেমধ্যে আমাদের যে খাদ্য ঘাটতি হয় সেটা ২৮ লক্ষ টনের বেশি না। এর অর্থ হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন না বাড়ানো গেলেও কেবল ইঁদুর মারলেই আমাদের খাদ্য ঘাটতি থাকবে না । ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ৭,৭৫,২৫,২১০টি ইঁদুর মারতে পারলে (টার্গেট) আমাদের খাদ্য ঘাটতি থাকবে না। দিন, তারিখ, সংখ্যা নির্দিষ্ট করে যখন কিছু বলা হয় সেটাই টার্গেট। ইঁদুর মারতে পারলে খাদ্যের অপচয় রোধ হবে, খাদ্যের পর্যাপ্ততা বাড়বে, পর্যাপ্ততা বাড়লে সবাই খাদ্য পাবে, এবং ক্ষুধা মুক্ত হবে বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা(ভিশন) প্রতিষ্ঠায় এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে ইঁদুর মারার কলের কারখানার সাইনবোর্ডে লেখা ভিশনটি যথার্থই বলতে হবে।

প্রত্যেক কোম্পানিকে একটি মিশন বিবৃতি তৈরি করতে হয়। বিবৃতিটি এমনভাবে তৈরী করতে হবে যা পড়লেই এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট হবেন যেমন- ক্রেতা-বিক্রেতা, কর্মী, মিডিয়া, বিনিয়োগকারী, সরকার, সমাজ সবাই যেন বুঝতে পারে কেন এই প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি কী অর্জন করতে চায়। মিশন বিবৃতিটি অনেক লম্বা হতে হবে এমনটিও নয়। কখনো কখনো এক লাইনের একটি বিবৃতিও মিশনের পরিপূর্ণ ধারণা দিতে পারে। কর্পোরেট কালচার তৈরীর ক্ষেত্রে এ ধরনের বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোন কাজটি করা যাবে, আর কোন কাজটি করা যাবে না এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই একটা ধারণা পাবে মিশন বিবৃতি থেকে। সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটা বাউন্ডারি তৈরি করবে এই বিবৃতিটি।

স্কয়ার তার বিবৃতিতে বলেছে “জীবন বাঁচাতে জীবন সাজাতে -স্কয়ার” । এটি একটি স্লোগানধর্মী বিবৃতি হলেও, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্কয়ারের সাথে যারাই সম্পৃক্ত হবে তাঁরা জেনে যাবেন এই প্রতিষ্ঠানে কি করা যাবে, কি করা যাবেনা। ধরা যাক, আপনি স্কয়ার টয়লেট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার। পাবনায় স্কয়ারের ফ্যাক্টরি অভ্যন্তরে জেনারেল ম্যানেজারের বাংলাতে আপনি থাকেন। রাতে হরকাতুল জিহাদের লোকেরা এসে আপনাকে অনুরোধ করল চারটি বড় বোমা বানিয়ে দেওয়ার জন্য। প্রতিটি ১০ লক্ষ টাকা হিসাবে ৪০ লক্ষ টাকা তাঁরা দেবে। সারাবছর “মেরিল” বিক্রি করে যেই লাভ পাওয়া যায় তার একটা বড় অংশ একরাতে কামাই করা যায় । কোম্পানীর জন্য অতিরিক্ত মুনাফা করার জন্য কাউকে শোকজ করা হয়েছে এমন ঘটনা খুব বিরল। অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারলে আপনার প্রমোশন হয়ে ডাইরেক্টর হিসেবে ঢাকার হেড অফিসে চলে আসার সুযোগ তৈরি হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একরাতে ৪০ লক্ষ টাকা মুনাফা করার প্রস্তাবটি আপনি গ্রহণ করবেন কিনা। যদিও আপনার পক্ষে চারটি মোমো বানানো তেমন কোনো কঠিন কাজ না। কারণ যেকোন কেমিক্যাল কম্পোজিশন ফ্যাক্টরিতে বোমা বানানোর মত যথেষ্ট কেমিস্ট এবং কেমিক্যাল থাকে । এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি এই কাজটি করবেন কিনা। বোমা বিক্রি করে যদি নির্বিঘ্নে ৪০ লক্ষ টাকা লাভ করতে পারেন আপনার হয়তো প্রমোশন হয়ে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেল উল্টো। বোমা তৈরীর সময় দুইজন “শহীদ” হয়ে গেল, আর ফ্যাক্টরি ছাদ উড়ে গেল। (বাংলাদেশ বোমা বানাতে গিয়ে মরলেও “শহীদ” বলে।

আশির দশকে মহসিন হলের চার তলায় থাকতো সানাউল হক নীরুর ভাই বাবলু । বোমা বানাতে গিয়ে হলের কক্ষটির দরজা জানালা ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। বাবলুও নিহত হয়। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বাবলুকে “শহীদের” মর্যাদা দানের জন্য মহসিন হলের মাঠ থেকে উপরের দিকে চারতলায় কেউ মর্টার দিয়ে বোমা উৎক্ষেপণ করেছে এইরকম একটি কাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “শহীদ বাবলু দিবস” পালন করা হয়। বাংলাদেশে মোটামুটি কোন দুর্ঘটনায় মরতে পারলেই শহীদ । যদিও ইউটিউবের হুজুরের ওয়াজে আমি শুনেছি, “যাকে তাকে যারা শহীদ বলে তাদের পরকালে খবর আছে! নিজের পিতা মাতার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেছেন, শহীদ না। দেশের ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেছেন, শহীদ না। একমাত্র আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যারা মারা গেছে তারাই কেবল শহীদ”।

হুজুরের কথা ধরলে ২০০৪ সালে ঝালকাঠিতে বিচারকদের হত্যা করতে গিয়ে যে দুইজন জেএমবি সদস্য আত্মঘাতী বোমায় নিহত হয়েছিলেন প্রকৃতপক্ষে তারাই শহীদ। বাংলাদেশ একজন সেনা প্রধান, যিনি তাঁর জীবদ্দশায় শত শত সেনা সদস্যকে হত্যা করেছেন বা অনেকটা বিনা বিচারে বা বিচারের নামে প্রহসন করে, শহরে কারফিউ দিয়ে, রাতের অন্ধকারে জেলখানায় ফাঁসি দিয়েছেন, তাকে আবার একদল সেনা সদস্য আরেক রাতে হত্যা করে। সেই মরহুম সেনা প্রধানকে পুরো জাতি কিন্তু “শহীদ” বলে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যায় শত শত সেনাসদস্যের হত্যার জন্য দায়ী ছিলেন এই সেনাপ্রধান।

১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টম্বর জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকায় নিয়ে এসে চারদিন বিমানবন্দরের আটকে রেখেছিল জাপান রেড আর্মির লোকেরা। এই সময়ে বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে এক হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে কোর্ট মার্শালে সংক্ষিপ্ত বিচার করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং অধিকাংশদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়। এদের বেশিরভাগই জানতো না কি অপরাধে তাদের ফাঁসি হচ্ছে। সামরিক কোর্টের বিচারকরা সেনাপ্রধানের কাছ থেকে আশা বিচারের রায়টি কেবল পরে শোনাতেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেওয়ার জন্য ডাবল শিফট চালু করা হয়েছিল। দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য এক পর্যায়ে হাত পায়ের রগ কেটে দেয়া হতো। এক পর্যায়ে আরও দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করার জন্য কিছু তথাকথিত ফাঁসির আসামিকে কুমিল্লায় জেলখানায় পাঠিয়ে সেখানে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়)

স্কয়ার গ্রুপের বার্ষিক সাধারণ সভা হচ্ছিল ঢাকায়, একজন শেয়ারহোল্ডার প্রশ্ন করে জানতে চাইলো, “আমি স্কয়ারের শেয়ার কিনেছিলাম ‘জীবন বাঁচাতে জীবন সাজাতে’ দেখে । আপনারা বলুন, বোমা কোন কাজে ? এক্ষেত্রে আপনার জবাব কি হবে? অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে অতিরিক্ত লাভ করেও আপনার প্রমোশন তো দূরের কথা, চাকরিটা চলে যাবে।

মিশন বিবৃতি এমন হতে হবে যাতে বিবৃতিটি ভবিষ্যতের পরিবর্তনকে ধারণ করতে পারে। এমন কি প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ধরা যাক, “এইডস প্রতিরোধ সমিতি” নামে আপনি একটি এনজিও প্রতিষ্ঠিত করলেন। এনজিও কার্যক্রম ব্যাপক সম্প্রসারিত হলো। প্রচুর এমবিএ ডিগ্রিধারী বেকার যুবকদের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সারাদেশে অফিস স্থাপন করলেন। এনজিও’র ব্যাপক রমরমা অবস্থায়। হঠাৎ খবর আসলো, এইডস এর টিকা বেরিয়ে গেছে। এবং এই টিকা অত্যন্ত সাশ্রয়ী, মাত্র এক টাকা খরচ পড়বে। মায়ের গর্ভধারণের সময় শিশুদের জন্য যে সকল টিকা দেওয়া হয় তার সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। এখন যেমন ‘ডিপিটি’ টিকা আছে তার সাথে এইডস এর টিকা যুক্ত করে নতুন টিকার নাম হবে ‘এডিপিটি’। তাহলে আপনার সমিতির কাজ কি হবে? সেজন্য ‘এইডস প্রতিরোধ সমিতি’ নামে কোন এনজিও না করে ‘সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ সমিতি’ করলে সেটাই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে। কারণ এই দুনিয়া থেকে এইডস নির্মল হলেও সকল সংক্রামক ব্যাধি চলে যাবে এর কোন সম্ভাবনা নাই । একটা চলে গেলে আরেকটা আসবে ‌। অতএব আপনার এনজিও কার্যক্রম জারি থাকবে।

লেখকঃ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102