শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

মির্জা ফখরুল

ইউরেনিয়াম কী জিনিস, জানেন না ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৭৫ এই পর্যন্ত দেখেছেন

বিএনপির নেতাদের মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ইউরেনিয়াম কী জিনিস তা উনি জানেন না।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণঅধিকার পরিষদের (রেজা) উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও রোহিঙ্গা সঙ্কট: শহীদ আবরার ফাহাদের প্রেরণা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আওয়ামী লীগের মধ্যে যে কয়জন একটু পড়াশোনা জানা মানুষ, তাদের মধ্যে তিনি একজন। আমরা তাই জানতাম। তার যে করুণ অবস্থা হয়েছে, তা জানতাম না। তিনি ইউরেনিয়াম কী জিনিস, তাই জানেন না। খনিজ ইউরেনিয়াম, এর জন্য তো বিশেষ কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। আমাদের একজন জুনিয়র ফ্রেন্ড বাইরে থাকেন। আমাকে বলেছেন, ‘‘আপনি কিন্তু প্রতিবাদ করতে যাইয়েন না। এটা আমাদের জন্য বিনোদন”।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এখন আর ঘরের মধ্যে সভা করার সময় নেই। এখন সময় এসেছে রাজপথে আমাদের কথাগুলোকে সামনে নিয়ে আসা। এই জাতির ওপর যে ভয়াবহ দানব চেপে বসে আছে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে একে সরানো ছাড়া জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। এবার মানুষ জেগে উঠেছে। আমার বিশ্বাস, সকল মানুষের বিশ্বাস, জনমানুষের বিশ্বাস এবার পরিবর্তন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কে ক্ষমতায় যাবে বা যাবে না-এটা এখন ভাবনার বিষয় না। তাই আর কথা নয়, বিলম্ব না করে আসুন বাম-ডান, উত্তর-দক্ষিণ বুঝি না দলমত-নির্বিশেষে যারা দেশকে ভালোবাসেন তারা সবাই জেগে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হোন। এই ভয়াবহ দানবের হাত থেকে থেকে দেশকে রক্ষা করুন, এই দানবকে সরাতে হবে।

রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমাদের ঐক্যের ক্ষতি হয়। অনেক সময় মনগড়া কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন। এটা করবেন না। এটা যারা করেন তারা আন্দোলনের পিছনে ছুরি মারছেন।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আয় তো বাড়েনি। অনেকের ঘরে খাবার নেই, কিন্তু অনেকে বলতেও পারেন না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তারা তো এই বাংলাদেশ চাইনি।’

ক্ষমতাসীনরা দেশকে লুটেরাদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশটাকে একটা লুটেরাদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে। বর্গীদের মতো এরা আসবে, লুট করবে, নিয়ে চলে যাবে।

দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন করতে গিয়ে গত এক বছরে রাজপথে আমাদের ২৩ জন নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তার আগে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৪৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়া শুরু করেছে। সর্বশেষ দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহানসহ ১৫ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে। অর্থনীতির সূচকগুলো নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে, গার্মেন্টস রপ্তানি কমে যাচ্ছে, বৈদেশিক টাকা আসছে না। এমন একটা অবস্থা করেছে যে, আর কয়েক মাস পরে আমদানি করার জন্য যে টাকা রিজার্ভে দরকার সেই টাকাও থাকবে না। রিজার্ভ একদম নিচে নেমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ঘরানার বড় বড় অর্থনীতিবিদ আছেন তারা বলতে শুরু করেছেন ভয়ংকর অবস্থা। এটা যদি ঠিক না করা যায়, অবিলম্বে যদি ব্যবস্থা না যায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার খেসারত দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা সরকারে আছে তাদের জনগণের প্রতি কোনো মায়া নেই, কোনো দরদ নাই, তাদের কোনো একাউন্টেবিলিটি নাই, তাদের কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, আমদানি করবে, যত খুশি চুরি করবে তাদেরকে প্রশ্নও করা যায় না। তাদেরকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রূপপুরে পারমানবিক পাওয়ার প্লান্ট করেছে। অন্য দেশেও এই প্লান্টে খরচ হয়েছে, তার থেকে চারগুণ বেশি টাকা দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম কেনা হয়েছে। কারণ কমিশন। পদ্মাসেতু করেছে ভালো কথা। সেখানে খরচ সর্বোচ্চ যেটা হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি ৪ গুণ বেশি পয়সা দিয়ে করা হলো। এখন সেতুর ওপর রেললাইন করা হয়েছে আজকে উদ্বোধন হয়েছে। কত টাকায় এটা করেছেন বলেন। এগুলো বললে ওদের মাথা খারাপ হয়েছে।’

২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই সংলাপে যেসব অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন তা রাখেননি। প্রথমেই আমার নির্বাচনী প্রচারে হামলা হয়েছিল। এখন আবার বলতে শুরু করেছেন যে, আমার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। ওটাই সংবিধান। সংবিধানেতো কাটছেরা করে কিছুই রাখেন নাই। আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। এটাকে তারা যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে ভোগ করবে। দেশের সর্বনাশ করে দিয়েছে।’

আওয়ামী লীগ যখন গণতন্ত্রের কথা বলে তখন ভূতের মুখে রাম নাম মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকায় লোকের চেয়ে গ্রোমের লোকেরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। গ্রাম এবং মফস্বলের মানুষের এই সরকারকে এক মুহূর্তও দেখতে চায় না।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকারের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব) মিয়া মশিউজ্জামান, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, আবদুল মালেক ফরাজি, যুগ্ম সদস্য সচিব আতাউল্লাহ, তারেক রহমান, সহকারী সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার শেলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদ ইসমাইল বন্ধন, ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম, জাহাঙ্গীর আলম, যুব নেতা ইমরান আল নাজির, ছাত্র নেতা সোহেল মৃধাসহ আরও অনেকে।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102