টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলার ভাটি অঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার একের পর এক গ্রাম। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ায় হাওরের গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হাওরের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া হাওরপাড়ের লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যার কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র এবং অপেক্ষাকৃত উঁচুতে থাকা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ভিড় করছেন। এর মধ্যে ভাকৈর পূর্ব,ভাকৈর পশ্চিম,ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর, মকার হাওর,হাইল হাওর, বড় হাওর, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর,পূবের হাওর, সৌলার হাওর, এসব এলাকার অনেক গ্রামের ভেতর দিয়ে বন্যার পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। বাজারগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে সাদির আলী (৪৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন।শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের পাশ্ববর্তী হাওরে এ ঘটনা ঘটে।নিহত সাদির আলী রোকনপুর গ্রামের মৃত গোল মোহাম্মদের ছেলে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে টানা বৃষ্টির মধ্যে রোকনপুর গ্রামের পাশ্ববর্তী হাওরে নিজের ফসলি জমিতে কাজ করছিলেন কৃষক সাদির আলী (৪৫)। এসময় হঠাৎ আকস্মিকভাবে বজ্রপাত হলে বজ্রাঘাতে কৃষক সাদির আলী ঘটনাস্থলে নিহত হন।
পানিউমদা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, দুপুরে হঠাৎ আকস্মিক ভাবে বজ্রপাত হলে আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদির আলী মারা যান। পরে হাওরে কাজে থাকা অন্যান্য কৃষক তার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে।
গ্রামীণ সড়কগুলোর বেশির ভাগ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে অসংখ্য পুকুর। হাওরের বিভিন্ন এলাকার অনেক বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়ায় এবং বন্যার পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
নবীগঞ্জ করগাও ইউপি চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা জানান, এ ইউনিয়নের চার-পাঁচটি গ্রাম ছাড়া সবগুলো গ্রাম এখন বন্যার কবলে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ভিড় করছেন। এরই মধ্যে এখানকার কলেজ-স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, তাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত পরিবারগুলোকে স্থান সংকুলান করা সম্ভব হবে না।
ভাকৈর ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন সুবা মিয়া জানান, তার ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম এখন বন্যাকবলিত। চারদিকে থৈ থৈ করছে বন্যার পানি। অনেক গ্রামের ভেতর দিয়ে স্র্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। অন্তত ৫শ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ইউনিয়নের সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়া হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ ভিড় করছেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের জায়গা হচ্ছে না। এছাড়া বাজারগুলো প্লাবিত হওয়ায় শুকনো খাবারও মিলছে না। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষকে সেভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
ভাঠির ইউপি চেয়ারম্যান রঙ্গলাল দাশ জানান, এ ইউনিয়নে বাজার, রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। পুরনো ও অপেক্ষাকৃত উঁচু গ্রামগুলোতেও এখন বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বর্ষণের সঙ্গে ঝড়ো বাতাস অব্যাহত থাকায় আফালের আঘাতে হাওরের গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বসতভিটা রক্ষা করতে লোকজন দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরপরও পানি বাড়তে থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ বলেন, বজ্রপাতে এক কৃষক মারা গেছেন বিষয়টি আমারা জেনেছি, নিহত কৃষকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কোন হিসাব এখনো করা হয়নি।
নিউজ /এমএসএম