জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য আমি রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে যাই। সেখানে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করি। ২৩ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ও ৩০ সেপ্টেম্বর হতে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফিরেছি।
আমি শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সাধারণ অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে বক্তব্য প্রদান করি। এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ছিল “আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন: সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা”। আমি আমার বক্তব্যে যেসব বিষয়সমূহ তুলে ধরেছি সেগুলির মধ্যে ছিল: বিশ্ব শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন এবং অভিন্ন সঙ্কট মোকাবিলায় বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিতার উপর গুরুত্বারোপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায়, স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের পরেও প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ঐ ক্যাটাগরির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ অব্যাহত রাখার আহ্বান। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কার করে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে বিশেষ ছাড়ে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থায়ন এবং সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান।খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি আঞ্চলিক ‘খাদ্য ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাব।
আমার সরকারের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও সাফল্যের বিষয়ে আলোকপাত করেছি। এসবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রম, গৃহহীন মানুষদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণে সরকারের নানামূখী কার্যক্রম, বিনামূল্যে বই বিতরণ ও বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের মত প্রকল্প অন্যতম। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলকে “শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ” হিসেবে উল্লেখপূর্বক অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার, বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং উগ্রপন্থা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরি। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের “শূন্য সহনশীলতা” নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।
বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে প্রত্যাবসানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর চাপ সৃষ্টির রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়, আমি সে দাবী জানিয়েছি। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছি যে, আমার সরকার সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাচ্ছে ও করে যাবে।
এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সামিট ও উচ্চ পর্যায়ের সভায় আমি যোগদান করি। এগুলির মধ্যে ছিল: High Level Thematic Session of Climate Ambition Summit; High Level Meeting on Universal Health Coverage; High-level meeting on Pandemic Prevention, Preparedness and Response; High-level Roundtable `Towards a Fair International Financial Architecture; Annual Meeting of the UNGA Platform of the Women Leaders; High Level Thematic Session of Climate Ambition Summit.
এসব উচ্চ-পর্যায়ের সভায় আমি বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরি। ভবিষ্যতে মহামারি মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করার প্রস্তাব করেছি। সকলের জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র সংবলিত ডাটাভিত্তিক ও আন্তঃপরিচালন যোগ্য একটি স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রস্তাব করেছি।
ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আলোচনায় আমি এসডিআর ঋণের সীমা কোটার পরিবর্তে প্রয়োজন ও ঝুঁকির ভিত্তিতে নির্ধারণ এবং সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছি। এছাড়া, ঋণদাতাদের মধ্যে সমন্বয় ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ সহজীকরণে অগ্রাধিকার প্রদান করার উপর গুরুত্বারোপ করেছি।
৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশেনের সাইড লাইনে বাংলাদেশ এ বছর দুটি উচ্চ-পর্যায়ের সভা – High-level side event on community clinic based Medical Services Ges High Level Side event on Rohingya crisis আয়োজন করে। কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় আমি পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অগ্রাধিকার তুলে ধরি- ১) কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা খরচ কমানো
২) কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ডিজিটাল ও আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান
৩) জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগ প্রতিরোধে সক্ষমতা বৃদ্ধি
৪) কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং
৫) কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাইমারি ডেটাবেইজ হিসেব ব্যবহার করা।
রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ-পর্যায়ের সভায় পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ও বিভিন্ন দেশের উচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুবিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতসহ অন্যান্য আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
নিউইয়র্ক অবস্থানকালে পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে আমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা হলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাম্বডিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও, জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও চ্যাথাম হাউজ কমিশন অন ইউনিভার্সেল হেলথ এর কো-চেয়ার Rt Hon Helen Clark, জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা, Under Secretary-General Rabab Fatima এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের Under Secretary Uzra Zeya আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগদান করি।
এবারের সম্মেলনে আমরা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের ”Adaptation Accelerator Pipeline” ও “Early Warning for All” উদ্যোগ দুটির প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে একযোগে আমরা Coalition on Sea Level Rise and its Existential Treat (C-SET)-এর অন্যতম Champion country হিসেবে যোগ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি জানিয়েছি।
আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত Loss and Damage Fund গঠনের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছি। এবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গঠিত “Coalition to address synthetic drug threats” বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে।
আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের SDG Stimulus Package-এর মাধ্যমে প্রতি বছর অন্তত ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ যোগানের আহ্বানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-পরিবেষ্টিত দেশ বা অঞ্চলসমূহের জন্য সমগযুক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের বহুমুখী উদ্যোগের আলোকে আমরা Locked developing countries-এর জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
এ সফরকালে আমি জাতিসংঘের ‘গভীর সমুদ্র চুক্তি’ বা Agreement under the United Nations Convention on the Law of the Sea on the conservation and sustainable use of marine biological diversity of areas beyond national jurisdiction (BBNJ) স্বাক্ষর করি।
এছাড়া, বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরির মধ্যে তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং বাংলাদেশ ও কাজাখস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী ব্যক্তিগণের ক্ষেত্রে ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সচিববৃন্দ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের উদারতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমাদের সূদৃঢ় নেতত্বে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি।
ওয়াশিংটন সফর
নিউইয়র্ক হতে ২৩ সেপ্টেম্বর আমি ওয়াশিংটন গমন করি এবং সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত অবস্থান করি।২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সভায় দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করার বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমি সবুজ জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন এবং “লস এন্ড ড্যামেজ” ফান্ডকে কার্যকর করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।
জেইক সুলিভান নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মত ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা হয়। আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। ঐদিন ভয়েস অব আমেরিকা আমার একটি সাক্ষাতকার নেয়। একইদিনে আমি ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেই।
লন্ডন সফর
রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আমি লন্ডনে যাই। সেখানে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করি। ২ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বিপুল পরিবর্তন বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রসারে অবদানের জন্য আমার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে অধিকতর বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও Aviation Partnership-এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আমি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ প্রসার এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথে যুক্তরাজ্যের জোরালো অবস্থানের জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া, আমরা আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশে অব্যাহত গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করি।
একই দিন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সভাপতি, যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্রব্যবসা বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী এবং বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য বিষয়ক দূত রুশনারা আলীর নেতৃত্বে ৬-সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। স্কটিশ সংসদের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের আহ্বায়ক ফয়সল চৌধুরীও এই দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সমস্যা, জলাবায়ু পরিবর্তন, গ্লোবাল সাউথ, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, বাংলাদেশের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য Aviation Partnership, নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
একই দিনে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট-এর সভাপতি লর্ড জিতেশ গাধিয়া এবং যুক্তরাজ্যের সংসদের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সহ-সভাপতি, সংসদের Conservative Friends of India-এর পৃষ্ঠপোষক লর্ড রামি র্যাঞ্জার পৃথকভাবে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
হিন্দুজা গ্রুপ (ইউরোপ)-এর চেয়ারম্যান প্রকাশ হিন্দুজার নেতৃত্বে হিন্দুজা গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। হিন্দুজা গ্রুপ বাংলাদেশের পরিবহন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফিনটেক খাতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি তাদের এ আগ্রহকে স্বাগত জানাই এবং হিন্দুজা গ্রুপকে বাংলাদেশে মোটরযান উৎপাদনের আহ্বান জানাই।
এছাড়া, একই দিন Omnia Strategy LLP-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার এবং Asian University for Women-এর চ্যান্সেলর শেরী ব্লেয়ার এবং ITLOSI ICJ-তে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের কৌঁসুলী প্রফেসর প্রায়াম আখাভান পৃথকভাবে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সোমবার (২ অক্টোবর) বিকেলে আমি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের আয়োজনে একটি নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করি। (সুত্র বাসস)