খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার পর ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে এবার সরাসরি মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কানাডা এখন খুনিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছ।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে কানাডার অস্বীকৃতির বিষয়ে ক্ষোভ জানাতে গিয়ে এ কথা বলেছেন তিনি।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে ইন্ডিয়া টুডের গীতা মোহানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কানাডার বিষয়ে বাংলাদেশের অভিযোগ তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনের শুরুতেই লেখা হয়েছে, ‘পাল্টে যাচ্ছে কূটনৈতিক দৃশ্যপট। খালিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার কারণে ভারত ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর, কানাডার প্রত্যর্পণ নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা শুরু করেছে।’
আর এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে হস্তান্তর করতে কানাডার অস্বীকৃতি।
বঙ্গবন্ধুর ছয় হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এখনো পাঁচজন পলাতক। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডা অবশ্যই সব খুনিদের আখড়া হতে পারে না। কিন্তু খুনিরা অবলীলায় কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিতে ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। খুনিরা যাদের হত্যা করেছে, তাদের স্বজনরা এই অবস্থায় কষ্ট পাচ্ছেন।’
খুনিদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে কানাডার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। কানাডার বন্দী প্রত্যর্পণ বিরোধী অবস্থানের কারণে তাদের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী জনমত। বিশেষ করে দেশটি মৃত্যুদণ্ড বিলোপ বিরোধী অবস্থান অপরাধীদের জন্য প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হয়ে উঠছে।
মানবাধিকারের সম্ভাব্য অপব্যবহার নিয়েও কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বহু মানুষের দ্বারা বহু সময় মানবাধিকারের ধারণার অপব্যবহার করা হচ্ছে, যা সত্যিই খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ এটাকে কিছু মানুষ অজুহাত হিসেবে খুনি ও সন্ত্রাসীদের রক্ষায় ব্যবহার করছে।’
কানাডা থেকে বন্দী প্রত্যর্পণের রাজনীতি একটি বিরাট আখ্যানের প্রতীক হয়ে উঠেছে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশের সাহসী দাবি কানাডার প্রত্যর্পণ নীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক এবং কানাডার সঙ্গেও বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক। দুই দেশই বন্ধু। আমি ভারত ও কানাডার মধ্যে এই সমস্যাটির বিশদ বিবরণ জানি না, তবে কানাডার সঙ্গে আমাদের সমস্যাটি আমি জানি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুনিরা কানাডায় বসবাস করছেন। আমরা কানাডা সরকারের কাছে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিকে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। দুর্ভাগ্যবশত, কানাডা আমাদের কথা শুনছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডা সারাদেশ থেকে সমস্ত খুনিদের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। আমি জানি কেউ খুনি হলে তারা নানা ধরনের মিথ্যা ছলনা করে কানাডায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কানাডা খুনিদের আড্ডায় পরিণত হচ্ছে। কানাডা একটি সুন্দর দেশ। এটি একটি মহান দেশ, কিন্তু এই বিশেষ আইন কানাডার সুনামকে প্রভাবিত করছে। সুতরাং, কানাডার খুনিদের অনুমতি দেয়া উচিত নয়, তাদের কানাডায় একটি নিরাপদ বাড়ি দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি খুনিদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এবং এরজন্য সব দেশের সহযোগিতা করা উচিত। এগুলো কিছু মৌলিক বিষয়। এই মৌলিক বিষয়গুলোতে, অন্যান্য সমস্ত ছোট জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করা উচিত। তাই যে কোনো খুনি বা ঘাতক বা সন্ত্রাসীকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে। পাকিস্তানি বা ভারতীয় বা বাংলাদেশি বা কানাডিয়ান কিনা তা বিবেচ্য নয়। সব সন্ত্রাসীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নিউজ /এমএসএম