শ্রীমঙ্গলে চা পাতার গুদামে বাংলাদেশ চা বোর্ডের মোবাইল কোর্টের দু’দিন ব্যাপী অভিযানে বেরিয়ে এসেছে নকল প্যাকেজিং কারখানা সকল উপকরণ। পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ চাপাতাসহ ও বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের চা পাতার মোড়ক। মোবাইল কোর্ট শ্রীমঙ্গলের সমর মিয়ার সোনার বাংলা রোডস্থ তানভির টি হাউসের ৭ টি গুদাম থেকে ৩,০২৫ কেজি অবৈধ চা জব্দ ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ রুহুল আমীন নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট শহরের সোনার বাংলা রোডস্থ তানভীর টি হাউসের সমর মিয়ার চা পাতার গুদামে অভিযান শুরু করে মোবাইল কোর্ট।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সমর মিয়া দীর্ঘদিন থেকে ফিনলেসহ দেশের নামীদামী চা কোম্পানি, ভারতীয় চা ব্রান্ড কলকাতা টিসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের মোড়ক নকল করে চা পাতা বাজারজাত করে আসছে। এবং তানভীর টি হাউসের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
অভিযানকালে গুদামের ভেতরে নকল মোড়ক, মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। গুদামের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক বস্তা চা-পাতা জব্দ করা হয়। এসব চা পাতা দেশের চা পাতা নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ও এসব চা পাতার অধিকাংশ নিম্নমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। গতকাল ১ম দিনের অভিযানকালে তানভীর টি হাউসের মূল মালিক সমর মিয়াকে পাওয়া যায়নি এবং বৃষ্টির কারণে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি। এসব ভালো করে যাচাই-বাছাই করার জন্য ৭ টি গুদামই মোবাইল কোর্ট সিলগালা করে রাখে।
অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন চা বোর্ডের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবিব, চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল।
মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনার পর প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপসচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ রুহুল আমীন শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সোনার বাংলা রোডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে দ্বিতীয় দিনের মত অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় চা ক্রয়ের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় প্রায় ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩,০২৫ কেজি অবৈধ চা জব্দ ও ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে গতকালের (২১.০৯.২০২৩খ্রি.) অভিযানে তানভীর টি হাউজ থেকে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যান্ডের বিপুল পরিমাণ নকল চা প্যাকেট এবং সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আসা চোরাই চা জব্দ করে ৭টি চায়ের গুদাম সাময়িকভাবে বন্ধ করে আদালত।শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এসব গুদামে প্রতিষ্ঠানের মালিক সমর মিয়ার উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ চা জব্দ করে আদালত।
অভিযান বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি বলেন, আমাদের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো, চা শিল্পের উন্নয়ন। চায়ের অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা এবং বৈধ ব্যাবসায়ীদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। যারা বৈধ ব্যবসায়ী তারা যেন এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্যই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় অবৈধ চায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, বৈধভাবে যদি ভারত থেকে চা আসে এতে আমাদের বলার কিছু নেই। সরকারের নিয়মনীতি মেনে টেক্স দিয়ে যদি কেউ ভারত থেকে চা আমদানি করে বা ব্যবসা করলে তাহলে কোন সমস্যা নেই। মূল কথা হলো, চা ব্যবসায় অবৈধ কোন কিছু করার সুযোগ আমরা দেব না। এক্ষেত্রে ভারতীয় চা হোক বা দেশের চা হোক, সর্বক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র যেমন থাকতে হবে তেমনি মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও আমাদের কড়া নজরদারি থাকবে। দেশের চা শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ চা বোর্ড কোন ধরণের অপকর্মের ছাড় দিবে না। সকল অসাধু ব্যবসায়ী ও অপকর্মের হোতাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। এজন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অভিযান বিষয়ে মোহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে নিলাম বহির্ভুত অবৈধ চা মজুদ এবং বিপণনের সাথে জড়িত। এতে একদিকে অস্বাস্থ্যকর নিম্নমানের চা ভোক্তাদের কাছে পৌছে যাচ্ছে অন্যদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা পঞ্চগড় থেকে এই অভিযান শুরু করেছি। এটি আমাদের দেশব্যাপী অভিযান। পঞ্চগড়ে ১০ দিন, এরপর চট্টগামে ১৫ দিনব্যাপী অভিযানের পর গত বুধবার থেকে শ্রীমঙ্গলে শুরু করেছি। চায়ের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সারাদেশে এ ধরণের অভিযান চলমান থাকবে।