মুষলধারায় বৃষ্টিতে অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা। মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫ জন। । বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
মিরপুরের শিয়ালবাড়ির পাশে হাজী রোড এলাকার কর্মাস কলেজ সংলগ্ন সুপার হোস্টেলের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন গণোমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নিহতরা একই পরিবারের মো. মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা এবং তাদের ছেলে হোসাইন। আর অনিক নামে আরেক ব্যক্তি মারা গেছেন। বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হয়েছেন আরও ৫ জন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
এদিকে ঢাকায় সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়েছে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েছেন রাতে ঘরমুখী মানুষ। অনেকেই বৃষ্টির কারণে কর্মস্থল থেকে বের হতে পারছেন না।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে রাত ১টার মধ্যেই ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর হাতিরঝিল, ধানমন্ডি-২৭, পান্থপথ, ঢাকা কলেজ, জিগাতলা, এলিফেন্ট রোড, এয়ারপোর্ট রোড, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও সড়কে হাঁটু পানি জমে গেছে।
গ্রীনরোড এলাকায় জামাল হোসেন নামের নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিসের কাজ শেষ হওয়ায় ৮টার দিকে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হই। নিচে এসে দেখি মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও বৃষ্টি না থামায় আবার অফিসে চলে আসি। পরে পৌনে দশটার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলে অফিস থেকে বের হয়ে বাসার পথ ধরি। রাস্তায় এসে দেখি তীব্র যানজট। এখনো গাড়ি পাইনি, গাড়ির অপেক্ষায় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছি।
এলিফ্যান্ট রোডে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলেছিলেন রেজাউল করিম প্লাবন, তার সাথে কথা হয় ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারে। তিনি বলেন, অফিস থেকে নেমে দেখি হাটু সমান পানি। রাস্তায় যান চলাচল একবারে থমকে আছে। বাধ্য হয়ে কোমর পানি পাড়িয়ে বাসায় ফিরলাম।
এদিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ফুটপাতের সবজির দোকান। ফেসবুকে দেয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, মিষ্টি কুমড়া পানিতে ভাসছে।
ধানমন্ডিতে দীর্ঘসময় যানজটে আটকে থাকা বিকাশ পরিবহণের চালক হুমায়ন বলেন, আজিমপুর থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগেছে। আর কতক্ষণ এখানে বসে থাকতে হবে জানিনা।
ধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজের পাশে কথা হয় জয়নাল নামের এক প্রাইভেট কার চালকের সাথে, তিনি বলেন পানি ঢুকে গাড়ি বিকল হয়ে পড়েছে। পানিতে আটকা পড়েছি, জানিনা কখন পানি সরবে, পানি কমলে মেকানিক নিয়ে এসে গাড়ি সচল করতে হবে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকাসহ দেশের ২০ জেলার ওপর দিয়ে রাত ১টার মধ্যেই ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
ঢাকা, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত অপর এক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ঝাড়খণ্ড এবং তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু উত্তরাংশে সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এর প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
নিউজ /এমএসএম