শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

বিশ্বব্যাপী

আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে ’এন্টিক’ নেতৃত্বকে অবসর দেওয়া প্রয়োজন

দেওয়ান ফয়সল
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১০৬ এই পর্যন্ত দেখেছেন

সম্প্রতি বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের যে সকল কমিটি রয়েছে তা যুগ যুগ ধরে একই কমিটি দ্বারা চলে আসছে। এসব নেতাদের বয়স এখন রিটায়ার্ড নেয়ারও উপরে চলছে। যদিও এ সব নেতাদের উচিৎ ছিল নিজ থেকেই অবসর নিয়ে তাদের অনুসারী সৎ এবং যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে সংগঠনে কাজ করে আসছেন তাদের সুযোগ দেয়া। কিন্তু তা না করে তারা এখনও তাদের সেই পদগুলো শক্ত হাতে ধরে বসে আছেন। যার ফলে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নেতৃত্বের গোলযোগ লেগেই আছে। ফলে দেশে প্রবাসে সব জায়গাতেই সংগঠনগুলোতে ২/৩ কমিটি এবং এগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন যার প্রভাব যত বেশী।

বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা গেছে, অনেকেই উপরের মহলে বড় অংকের টাকা দিয়ে তাদের পদগুলোকে নিরাপদ করে রেখেছেন, যা আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের জন্য খুবই দু:খজনক।

কয়েক মাস পরেই আসছে বাংলাদেশে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন। এবারের এই নির্বাচন নিয়ে বিদেশীরা বাংলাদেশকে নিয়ে যে দাবা খেলা শুরু করেছে তার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বোঝার কোন উপায় নেই। দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে কোন ভাবেই সহ্য করতে পারছে না, তাই তারা প্রবাসী বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদেরকে রুখতে হলে দরকার আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী রাখা। সুতরাং আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী রাখতে হলে তৃণমূল থেকে শুরু করে সারা দেশে আওয়ামী লীগের যে সংগঠনগুলো আছে সে সব সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের রদবদল করে তরুন প্রজন্ম থেকে বাছাই করে যারা সত্যিকারের আওয়ামী লীগের আদর্শের প্রতি আনুগত্য রেখে রাজনীতি করছে তাদের নেতৃত্বে আনা এবং বিভিন্ন দল থেকে এসে আওয়ামী লীগে যোগদানকারীদের (হাইব্রিড দের) দল থেকে বহিস্কার করার ব্যবস্থা করা। তা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, প্রবাসেও হতে হবে।

এই তরুণ নেতাদের পক্ষেই সম্ভব সাধারণ জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা গভীর করে দলকে শক্তিশালী করে তোলা। আওয়ামী লীগের সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিটি কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা, যাতে নতুনরাও নেতৃত্বের সুযোগ পায়। এর ফলে নতুন লীডারশীপ গড়ে উঠবে, যা দলের জন্য খুবই জরুরী। এই ধারা অব্যাহত রাখলে সংগঠনের নেতৃত্বের জন্য গোলযোগ হওয়ার কথা নয়।

আওয়ামী লীগের সংবিধানের ধারা অব্যাহত না রাখার কারণেই আজ আওয়ামী লীগে এত দ্বিধাদ্বন্ধ, একই কমিটির মধ্যে বিভক্ত হয়ে ২টা ৩টা কমিটি হয়েঠে যা অপ্রত্যাশিত। কমিটিতে এসব দ্বন্ধের কারণেই নেতৃবৃন্দকে সম্মান পাওয়ার বদলে হতে হচ্ছে নাজেহাল, দেশে-বিদেশে সব জায়গায় তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই সময় থাকতে দীর্ঘ দিন থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রধান পদগুলোর এসব নেতাদের, (যাদের আমি আখ্যায়িত করেছি ’এন্টিক নেতৃত্ব” হিসেবে) তাদের অবসর দিয়ে নতুনদের সুযোগ দেয়া হোক।

সবাই স্বীকার করবেন যে, এসব নেতারা তাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারেন যদি তারা নিজেরা পদ থেকে সরে গিয়ে নতুনদের নির্বাচিত করে সঠিক পথে পরিচালনার পথ প্রদর্শক হিসেবে অর্থাৎ তারা ‘উপদেষ্ঠা /পরামর্শদাতা’ হিসেবে কাজ করেন। যার ফলে তারা যেমন দলের মধ্যে একটা সম্মানজনক অবস্থানে থাকবেন ঠিক তেমনি সংগঠনটি পূর্বের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দুর্ণাম মুক্ত হবে। বিষয়টি ভালভাবে চিন্তা ভাবনা করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য সহ নীতি নির্ধারক বৃন্দের প্রতি অনুরোধ রইলো।

এদিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অধিবেশন শুরু হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) থেকে। শেখ হাসিনা সহ বিশ্বের দেড় শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান যোগ দিচ্ছেন এবারের অধিবেশনে। এ বছর সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন জলবায়ু ইস্যুর পাশাপাশি প্রাধান্য পাবে ই্উক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্য্যন্ত চলবে সাধারণ সভার আলোচনা। সাধারণ বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি ও সাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব-শান্তি, নিরপাত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ূ ও ন্যায়বিচার এর মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মিলিত হবেন যা হবে বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায়।

২৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন এবং সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্য্যন্ত থাকবেন। ওয়াশিংটন অবস্থানকালে তিনি আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় যোগদান করার কথা রয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রেও আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে ৩টি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপ হচ্ছে বেশ কয়েক বছর আগে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া কমিটি। এই কয়েক বছর যাবত ক্ষমতায় থাকা একই নেতৃত্বকে দলের অনেকেই আর মেনে নিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন থেকে তাদের দাবী হচ্ছে, পুরাতন নেতৃত্বকে সরিয়ে তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া হোক। প্রধানমনন্ত্রী ওয়াশিংটন থাকাকালীন সময়ে যদি এবার নতুন কমিটি গঠন করে না দেয়া হয়, তাহলে একটা বিরাট গন্ডগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, যুক্তরাজ্যেও আওয়ামী লীগ কমিটিগুলোরও একই অবস্থা। একই অবস্থায় আছে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসেও। এখানকার প্রধান প্রধান পদগুলোর নেতৃবৃন্দ বহু বছর ধরে পদ দখল করে বসে থাকার কারণে তরুণদের নেতৃত্বে আসার কোন সুযোগ না পাওয়ায় ভেতরে ভেতরে তারাও ফুঁসে উঠছেন। যে কোন সময় এ দেশেও প্রতিটি কমিটির নেতৃত্বে একটা বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে। সুতরাং সময় থাকতে কমিটিগুলো নতুন করে সাজিয়ে আওয়ামী লীগকে বীর দর্পে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার এবং এ কাজটি করতে হবে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্যকে।

লেখকঃ দেওয়ান ফয়সল, কলামিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

 

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102