বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

গুরুদেব’দের হাতে রাখতে বিএনপির নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিকল্প নেই!

দেওয়ান ফয়সল
  • খবর আপডেট সময় : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১১৭ এই পর্যন্ত দেখেছেন

আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করবে কি না এ নিয়ে চলছে সাধারণ জনগণের মধ্যে নানান জল্পনা কল্পনা। বাংলাদেশ এবং প্রবাসে দেখা যায় নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসে মানুষের মধ্যে নির্বাচনী বিশ্লেষণ ততই প্রখর হয়ে ওঠেছে।এছাড়াও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা সহ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে তাদের বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য প্রকাশ করতে দেখা যায়। যেহেতু বিএনপি বাংলাদেশে একটি বড় রাজনৈতিক দল, সেহেতু বিভিন্ন দলীয় সমাবেশে তাদের বক্তব্যগুলো সবাই গুরুত্ব দিয়ে শুনছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে দূদুল্যমান অবস্থায় আছে।

সরকারের উপর যেমন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপ আছে যাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় এ নিয়ে। এ দিকে সরকার সব সময়ই বলে আসছে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। এছাড়াও সরকার বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এই আশ্বাসও দিয়েছে যে, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যেসব নেতৃবৃন্দ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না তা পর্য্যবেক্ষণের জন্য তাদের বিভিন্ন ভোট সেন্টারগুলো ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে, যার ফলে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের উপর পুরোপুরি আস্থা স্থাপন করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দদের পক্ষ থেকেও এখন বিএনপি’র উপর চাপ এসেছে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার।

গত ২৪ আগষ্ট একটি অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যার হেডলাইন হচ্ছে ”নাটকীয় সিদ্ধান্তে সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি” খবরের কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরলাম।
বিএনপি তার রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করতে যাচ্ছে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে বিএনপি’র অন্দর মহল থেকে। বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রের পরামর্শের প্রেক্ষিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবার নাটকীয় ঘোষণা দিতে পারে।

বিএনপি’র একাধিক সূত্র এ ধরণের আভাস দিয়েছে। তারা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি’কে পরামর্শ দিচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য এবং নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সে বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ পশ্চিমা দেশগুলো দেখবে এবং নির্বাচনে যদি কোনো রকম কারচুপি হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্যরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ রকম একটি অবস্থানের প্রেক্ষিতে বিএনপি এখন সুর পাল্টাতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি’র এখন নতুন যে কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে, তা হচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে যাবে। বিএনপি’র একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এক দফা আন্দোলনের একটি কৌশল হিসেবে তারা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন।

উপরে খবরটি যে সত্য তার প্রমাণ পেলাম ইউকেবিডি ডটকম-এ প্রকাশিত আরেকটি খবর পড়ে। গত ২৬ আগষ্ট শনিবার দুপুরে নাটোর সিংড়া উপজেলা কার্যালয়ে বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, আগামী দিনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেবেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যই ফলোআপ চিকিৎসার ভান করে গত ২৪ আগষ্ট সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ও বড় মেয়ে। এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে সিঙ্গাপুরে আছেন বিএনপি’র আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ২৬ আগষ্ট ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজ আব্বাস। শুধু বিএনপি’র নেতারাই নয়, জানা গেছে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামও সিঙ্গাপুর গেছেন। বিএনপি ও জাপা নেতারা সেখানে বৈঠক করারও কথা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে সাথে সাথেই মিডিয়ার সামনে হাজির হতে হবে এবং তা সাথে সাথে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়ে যাবে, তাই তারা সিঙ্গাপুরে গিয়ে জমায়েত হয়েছেন। সেখানে বসে তারা তাদের নেতা তারেক রহমানের সাথেও নির্বিঘ্নে আলাপ করতে পারবেন এবং তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হবেন বিশ্বনেতৃবৃন্দের দেয়া পরামর্শগুলো। তারেক রহমান যদি তাঁর নেতাদের কথায় একমত হতে পারেন, তাহলেই হয়তো নেতারা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পরপরই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ঘোষণা দিতে পারেন।

বিএনপি কেন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে তা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। বর্তমানে একদিকে তারা সরকার হঠানোর এক দফা আন্দোলন নিয়ে মাঠে আছে, অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাদের অন্যান্য প্রভু দেশগুলো যারা বিএনপি’কে বলতে গেলে এখন প্রকাশ্যেই সমর্থন করছে তারাও এখন বিশেষ বেকায়দায় পড়েছে। তার কারণ হচ্ছে, এ সব নেতৃবৃন্দ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে যাতে নির্বাচন অবাধ, সুণ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়, তার উত্তরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে আস্বস্থ করেছেন এই বলে যে, সংবিধান মোতাবেক, যে ভাবেই হোক আমরা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে করবো। প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসে তারাও খুশী নিয়েছে এবং বিশ্বাস করছে যে নির্বাচন ঠিক মতোই হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের একটি সংবিধান আছে। যেভাবে আছে তাদের দেশগুলোতেও। তাদের দেশের ব্যাপারে তাদের দেশে যা করতে হয় তা সংবিধান মোতাবেকই করতে হয়। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর কথা তারা মেনে নিয়েছে। সংবিধান হচ্ছে প্রত্যেকটি দেশেরই একটি গাইড লাইন, কাজেই সংবিধান লংঘন করে কোন দেশেরই কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। একই ভাবে বাংলাদেশেরও।

বিএনপি’র বিদেশী প্রভুরা এখন বাধ্য হয়েই বিএনপি’কে বোঝাতে চেষ্টা করছে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে অন্যথায় তাদেরই ক্ষতি হবে। কাজেই বিএনপি এখন ভীষণ বেকায়দায় আছে। তারা এও চিন্তা করছে যে, যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করে তা হলে গত কয়েকটি বছর যাবত কোটি কোটি টাকা খরচ করে তাদের প্রভুদের হাতের কাছে পেয়েছে, এ পরিস্থিতিতে যদি তাদের কথা না শুনে নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে হয়তো প্রভুরা হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচন বয়কট করে যদি জোরে বলে ’সরকার হঠাও’ এই এক দফা দাবি আদায়ে যদি সফল না হতে পারে, তাহলে বাংলার মাটিতেই বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির যে কবর রচিত হবে, তাও তারা ভাল করে জানে। এখন তাদের অবস্থা হচ্ছে, ’শ্যাম রাখি না কুল রাখি’।
আমার মনে হয় বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের পাল্লাতে ওজন করে দেখবে কার ওজন বেশি, আওয়ামী লীগ না বিএনপি’র। এ কথা বিশ্ববাসী জানে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ ছাড়া কাউকে সাহায্য করে না। যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। এখানে তাদের পাল্লার ওজন আওয়ামী লীগের পক্ষে অর্ধেক নেমে গেলো। অন্যদিকে, এই জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত ১৪ বছরের পরিশ্রমের ফসল এই বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ থেকে উন্নয়নশীল একটি দেশে পরিণত হতে চলেছে। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নে বিদেশীদের চোখ এখন বাংলাদেশের দিকেই।

প্রথমমত: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, দ্বিতীয়ত: চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল উদ্বোধনের পথে,তৃতীয়তা: ঢাকা মেট্রোরেল চলাচল শুরু, আজ উদ্বোধন হলো ঢাকায় বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট ’এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’, যে রাস্তা দিয়ে সাড়ে তিন ঘন্টার রাস্তা যাওযা যাবে মাত্র ১০ মিনিটে। এই ’এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ চালু হওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি চলাচল শুরু হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আনন্দের বন্যা।

সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে যাত্রীরা বলছে, আগে ফার্মগেট থেকে বিমান বন্দরে যেতাম সাড়ে তিন ঘন্টায়, এবার এসেছি মাত্র ১০ মিনিটে, আমাদের কি যে আনন্দ লাগছে। এছাড়াও ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলার রাস্তাঘাটের যে উন্নয়ন সাধন হয়েছে তা কল্পনারও বাইরে। যার ফলে সাধারণ মানুষের কাজকর্ম সহ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের হিসেব নিকেশ করলে তারা লুঠপাট, সন্ত্রাস, হত্যা-গুম সহ যতোসব অপকর্ম। দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের কোন ভুমিকা খুঁজে পাবে না। সুতরাং সহজেই বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিসেবের পাল্লায় ওজন করলে দেখবে বিএনপি’র ওজন একেবারেই শূণ্যের কোঠায়।

আমার মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের স্বার্থের দিক দেখে, তাহলে আওয়ামী লীগকে সরকারকেই সমর্থন করতে হবে। আবার তাও বলে রাখা দরকার, তারা যদি মনে করে বাংলাদেশ বেশি এগিয়ে গেলে তাদের কব্জায় রাখতে পারবেনা তাহলে, এই বিএনপি-জামায়াত’কে দিয়ে জঙ্গীগোষ্ঠী তৈরী করে আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্রে পরিণত করতেও তারা দ্বিধাবোধ করবে না। সুতরাং এব্যাপারে সরকারকে বিশেষ ভাবে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। বিদেশীদের পদচারণার দিকে নজর রাখতে হবে।

লেখকঃ দেওয়ান ফয়সল, কলামিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102