আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রতিদিন সুষম খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। কেননা এই খাবার থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন মেলে। এই উপাদান দুটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম হচ্ছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা আমাদের হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
শুধু তাই নয়, হার্ট ও শরীরের অন্যান্য পেশীগুলোর কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম। তাই সুস্বাস্থ্যে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অনেক দরকারী। পক্ষান্তরে এর অভাবে অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওপেনিয়া এবং আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ক্যালসিয়ামের অভাবে কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে-
পেশীর সমস্যা
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- পেশীতে টান ধরা, ব্যথা হওয়া। ক্যালসিয়াম পেশী সংকুচিত এবং শিথিল করতে সহায়তা করে। ক্যালসিয়ামের অভাবে পেশীগুলো তাদের স্বাভাবিক টোন বজায় রাখতে পারে না। এর ফলে পেশীর দুর্বলতা, খিঁচুনি, যন্ত্রণার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অসাড়তা ও শিহরণ
হাইপোক্যালসেমিয়ার অন্যতম উপসর্গ হলো হাত এবং পায়ে শিহরণ কিংবা ঝি-ঝি ধরা। তা ছাড়া ক্যালসিয়ামের গুরুতর অভাবে শরীরে অসাড়তাও সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকোষে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। তাই শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটলে স্নায়ু কোষগুলো সংবেদনের অনুভূতি এবং সংকেত পাঠাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
অত্যন্ত ক্লান্তি বোধ করা
ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে অত্যন্ত ক্লান্তি এবং অলসতা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া এর ফলে অনিদ্রার সমস্যাও হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাবে ক্লান্তির ফলে হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা এবং ব্রেন ফগ হতে পারে। এর ফলে মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া এবং বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।
নখ ও ত্বকের সমস্যা
দীর্ঘদিন ধরে যদি ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়, তাহলে শুষ্ক ত্বক, শুষ্ক ও ভঙ্গুর নখ, রুক্ষ চুল, একজিমা, ত্বকের প্রদাহ, ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
অস্টিওপেনিয়া ও অস্টিওপরোসিস
হাড় ক্যালসিয়াম ভালোভাবে সঞ্চয় করে রাখতে পারে। তাই শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে, শরীর হাড় থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণ করতে শুরু করে। যার ফলে হাড়ের গঠন দুর্বল, ভঙ্গুর এবং আঘাতের প্রবণ হয়ে ওঠে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন যদি এই ক্যালসিয়ামের অভাব থেকে গেলে হাড়ের খনিজের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং এটি শরীরকে অস্টিওপেনিয়ার দিকে নিয়ে যাতে পারে। আর এই অস্টিওপেনিয়ার থেকে পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিসও সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাড়গুলো অত্যন্ত পাতলা হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফ্রাকচার প্রবণও হয়ে ওঠে।
রিকেট রোগ
ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের অন্যতম অভাবজনিত রোগ হলো রিকেট। এটি মূলত বাচ্চাদের একটি রোগ। ক্যালসিয়ামের অভাব, হাড়কে নরম এবং দুর্বল করে তোলে। তা ছাড়া এটি হাড়ের স্বাভাবিক গঠনেও বাধা সৃষ্টি করে।
দাঁতের সমস্যা
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিলে দাঁতের ক্ষয়, ভঙ্গুর দাঁত, অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ির সমস্যা এবং দাঁতের শিকড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সূত্র: বোল্ডস্কাই
নিউজ /এমএসএম