বিদেশ যাবার পূর্বে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করা নিয়ে বছরের পর বছর নানা জটিলতার শিকার হয়ে আসছেন বিদেশগামী কর্মীরা। আর এই বিএমইটি স্মার্ট কার্ড মূলত গুরুত্বপূর্ণ ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হিসেবে কাজ করে, যা একজন বিদেশগামীকে তার বিদেশে যাবার সরকারী অনুমোদনপত্র হিসেবেও গৃহীত হয়।
এটি ভিসা, মেডিকেল রেকর্ড, ব্যাংক তথ্য এবং বিদেশি চাকরির সত্যতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ যাচাই করার কাজে লাগে। ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের সুবিধার্থে এবং সহজীকরণে পূর্ববর্তী সময়গুলোতে অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীদের একটি প্রিন্টেড বিএমইটি স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হতো, যা প্রায়ই বিলম্বিত হতো এবং বিদেশ যাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতো।
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষাণ ব্যুরো ‘(বিএমইটি)’র সহযোগিতায় এনালগ এবং জটিল এই প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটাল অভিবাসনে এবার যোগ হয়েছে ডিজিটাল স্মার্ট সেবা। যার ফলে বিএমইটি স্মার্ট কার্ড এবার পরিণত হয়েছে সত্যিকারের স্মার্ট কার্ডে অর্থাৎ অনলাইন ক্লিয়ারেন্স অ্যাপ্লিকেশন এবং ডিজিটাল কিউআর কোড ভিত্তিক স্মার্ট কার্ড চালু করেছে কতৃপক্ষ। যার মাধ্যমে এখন থেকে আর কোন বিদেশগামীকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের জন্য বিএমইটিতে ঘুরতে হবেনা।
বিদেশে যাওয়ার যাবতীয় কাগজপ্রত্রাদি অনলাইনে জমা দেওয়ার পর পর সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারী অনলাইনেই পেয়ে যাবেন স্মার্ট কার্ড। যা তার ফোনে বা অন্য কোথায় সুবিধামতো ডাউনলোড করতে পারবেন। এর ফলে প্রিন্টেড কার্ডের জন্য অপেক্ষা কিংবা শেষ মুহূর্তে স্মার্ট কার্ডের জটিলতার অবসান হলো।
আর এই যুগান্তকারী কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করেছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষাণ ব্যুরো ‘(বিএমইটি)’র ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার বাংলাট্র্যাক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘আমি প্রবাসী লিমিটেড’। বেশ কিছুদিন ধরে আমি প্রবাসী অ্যাপ এবং পোর্টালে পরীক্ষামুলকভাবে এই সেবাটি চললেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অনলাইন স্মার্ট কার্ড কার্ড এবং কিউআর কোর্ড ভিত্তক স্মার্ট কার্ডের সুবিধাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে বলে জানান আমি প্রবাসি লিমিটেডের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক গ্রুপের পরিচালক নামির আহমেদ।
তিনি বলেন, এই সার্ভিসটির মধ্য দিয়ে ডিজিটাল অভিবাসন আরো একধাপ এগিয়ে স্মার্ট অভিবাসনে রূপান্তরিত হলো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করলো এই স্মার্ট সার্ভিসটি। নামির আহমেদ বলেন, আগে একজন বিদেশগামীকে তার বিদেশ যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএমইটি স্মার্টের অপেক্ষায় নানাবিধ জটিলতার পড়তে হতো, তবে এখন আর কোন ধরণের জটিলতার মুখোমুখী হতে হবেনা কোন বিদেশগামীকে। এর মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মী খুব সহজেই এবং বিএমইটিতে না এসেই তার স্মার্ট কার্ড পেয়ে যাবেন,যা তার মোবাইলেই ডাউনলোড করতে পারবেন। আর সেটির প্রিন্টিং জটিলতায় না গিয়ে সরাসরি কিউআর কোডের মাধ্যমেও নিতে পারবেন ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স।
এদিকে বিএমইটি কতৃপক্ষ জানিয়েছে, এর ফলে তাদের কর্মতৎপরতাও হয়েছে আরো স্মার্ট এবং তড়িৎ। তারা বলছে, ক্লিয়ারেন্সের আবেদনটি অনলাইন হওয়ার ফলে (বিএমইটি কর্তৃপক্ষ) তাদের প্যানেল ব্যবহার করে খুব সহজেই দ্রুত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন দিতে পারছেন। সেইসাথে ‘আমি প্রবাসী প্ল্যাটফর্মের অটোমেটেড ভেরিফিকেশন প্রসেস অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রায় সকল ধরনের তথ্য যেন সুসংগতভাবে একটি ইকোসিস্টেমের মধ্যে অবস্থান করে সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করছে ‘।
যেভাবে পাবেন বিএমইটি স্মার্ট কার্ড?
আমি প্রবাসী অ্যাপের গিয়ে যাবতীয় কাগজপত্রাদিসহ একজন বিদেশগামীকে অনলাইন ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের সাথে সাথেই অভিবাসন প্রত্যাশীগণ তাদের মুঠোফোনে স্মার্ট কার্ডটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা প্রিন্টও করতে পারবেন। সেইসাথে কিউআর কোডের মাধ্যমে স্মার্টটি দেখাতে পারবেন ইমিগ্রেশনসহ বিশ্বের যে কোথাও। এর ফলে স্মার্ট কার্ডটি হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোন ভয়ও থাকছেনা।
এমন অভাবনীয় সুবিন্যস্ত পদ্ধতিটি সময় ও অর্থের অপচয় কমানোর পাশাপাশি প্রিন্টেড কাগজের প্রয়োজনীয়তাও কমাচ্ছে। এছাড়া এই পদ্ধতিতে বিএমইটি কর্মীগণ দ্রুততার সাথে ফাইল যাচাই করতে পারছেন এবং প্রার্থীগণ সহজেই তাঁদের অনুমোদিত ফাইলের অবস্থানও নির্ণয় (ট্র্যাকিং) করতে পারছেন। সেইসাথে সংগ্রহও করতে পারছেন।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকে বিমানবন্দরের দীর্ঘ লাইনের কোনই সম্ভাবনা নেই। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ যেন আমি প্রবাসীর এই যুগান্তকারী পদ্ধতিতেই নিহিত। বর্তমানে, কিউআর কোড সংযুক্ত বিএমইটি স্মার্ট কার্ডটি স্ক্যান করে বিদেশগামী কর্মীগণ তাদের বিদেশযাত্রা শুরু করতে পারছেন যা একই সাথে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার স্বায়ত্তশাসন, দ্রুততা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
নিউজ /এমএসএম