বাংলাদেশের জয়ের পথে কেবল বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত বেরসিক বৃষ্টি। আগের রাতের তুফানে মিরপুরের সবুজ গালিচা ভিজে টইটুম্বুর হলেও শনিবার সকালের প্রহর রোদ বার্তা দিচ্ছিল, আজ দিনটা কেবল বাংলাদেশেরই। নিজেদের পুঁজিতে পর্বত সমান রান করেও যদিও বেরসিক বৃষ্টির বাগড়ায় পড়তে হয় তাহলে ক্রিকেটের প্রতি ভালেবাসাটাই যেন কমে যেত!
তেমন কিছুই হয়নি মিরপুর শের-ই-বাংলায়। সূর্যর প্রখরতার সঙ্গে বাংলাদেশের পেসারদের ঝাঁঝালো আক্রমণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেয়ে গেল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে ৬৬২ রানের লক্ষ্য দিয়ে ১১৫ রানে গুঁড়িয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে।
যা নিজেদের ২৩ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়। আর টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম জয়। ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়া দ্য ওভালে ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়েছিল। এরচেয়েও বড় জয় আছে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল।
আফগানিস্তানকে রানের ধ্বংসস্তূপে চাপা দিয়ে চার বছর আগের পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধও নিলে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে রশিদ খানের দল চট্টগ্রামে স্বাগতিকদের ২২৪ রানে হারিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামর্থ্যের পাশে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। পরাজয়ের সেই দুঃস্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল অনেকেরই। সময় লাগলেও ইতিহাসে জড়িয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল লিটন অ্যান্ড কোংরা।
জয়ের থেকে ৮ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ১৩৩ মিনিটের খেলায় কাজটা অতি সহজেই করে ফেলে বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে অসহায় আত্মসম্পর্ণ করছিলেন ব্যাটসম্যানরা। আসা-যাওয়ার মিছিলে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারেননি কেউ। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। লাইন ও লেন্থ ধরে ধারাবাহিক আক্রমণ চালান। সবুজ উইকেটে বল লাফিয়েছেও বেশ। শরীরের ওপর তাক করা বাউন্সগুলোর জবাব জানা ছিল না অতিথি ব্যাটসম্যানদেরও।
প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকা তাসকিনের সুযোগ হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে ৫ উইকেট পাওয়ার। কিন্তু ভাগ্যদেবী পাশে না থাকায় তাসকিনের ফাইফার পাওয়া হয়নি। জহির খানকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়েও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান।এরপর ফুলটসে বোল্ড হলে নো বলের কারণে বেঁচে যান। শেষমেশ তাসকিনের শর্ট বল জহির খানের কনুইয়ে আঘাত করলে মাঠ থেকে উঠে যান। আফগানিস্তানের ইনিংস থেমে যায় সেখানেই। এছাড়া আগের দিন মাথায় আঘাত পাওয়া হাশমতউল্লাহ শহীদি আজ ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি।
৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাসকিন এই ইনিংসে ছিলেন দলের সেরা। এছাড়া ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া মিরাজ ও ইবাদত পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের নায়ক হয়েছেন দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত।
টেস্টে অসহায় আত্মসম্পর্ণের পর আপাতত আফগানিস্তান দল ফিরে যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে পহেলা জুলাই তারা আবার বাংলাদেশে ফিরবে। সিলেটে তিন ওয়ানডের পর চট্টগ্রামে দুই টি-টোয়েন্টি খেলবে দুই দল।
নিউজ /এমএসএম