রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

ঋণের অর্থে ডিজিটাল ব্যাংকের মালিক হওয়া যাবে না

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩
  • ১৪৭ এই পর্যন্ত দেখেছেন

ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা অনুমোদন করেছে। তাতে ঋণ করা অর্থ দিয়ে কেউ এ ধরনের ব্যাংকের মালিকানায় আসতে পারবেন না।

যদি উচ্চ আদালত থেকে কোনো ঋণ খেলাপি স্থগিতাদেশও পান, তিনিও ডিজিটাল ব্যাংকের মালিক বা শেয়ার হোল্ডার হতে পারবেন না।

ডিজিটাল ব্যাংক কাউন্টারে কোনো সেবা দেবে না, কোনো এটিএম মেশিনও থাকবে না। ফলে নগদ টাকা জমা বা তোলার জন্য গ্রাহককে নির্ভর করতে হবে অন্য ব্যাংক বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ওপর। এছাড়া কার্ড বা কিউআর কোডে লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহক।

দেশের ভেতরে এই ব্যাংক যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। কিন্তু বৈদেশিক লেনদেনের সুযোগ থাকবে সীমিত। ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রচলতি নিয়মের সবই মানতে হবে ডিজিটাল ব্যাংককে। ব্যবসা শুরুর ৫ বছরের মধ্যে আসতে হবে পুঁজিবাজারে।

গত বুধবার ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকের পাশাপাশি নতুন ধরনের এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পথ খোলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে উদ্যোক্তাদের মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয়।

ব্যাংক-কোম্পানি আইনের আওতায় প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং পরিশোধ সেবা (পেমেন্ট সার্ভিস) পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪ এর বিধান অনুসরণ করতে হবে।

বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা দিচ্ছে আরও কয়েকটি কোম্পানি, যেগুলো মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত।

মালিক হতে পারবেন যারা

ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালিত হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। ফলে এ ধরনের ব্যাংকের পর্ষদেও এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। উদ্যোক্তা থেকে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে।

ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও শেয়ারহোল্ডারদের অর্থ নগদ টাকায় পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে উদ্যোক্তাদের অর্থ জমা রাখতে হবে নগদ টাকায়। আয়কর বিবরণীতে সেই টাকার উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।

যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে থাকা এ হিসাবটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে থাকবে। ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদন পেলে ব্যাংক হিসাবটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

উদ্যোক্তা বা শেয়ারহোল্ডার যে অর্থ এই ব্যাংকে লগ্নি করবেন, তা কোনো ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান, পরিবারের সদস্য বা অন্য কোথাও থেকে ঋণ বা ধার করতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি কোনো কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবে না।

উচ্চ আদালত বা অন্য কোনো আদালতের আদেশের কারণে খেলাপি না দেখানো গ্রাহকও এ ব্যাংকের মালিকানায় আসতে পারবেন না।

সেবা দেয়ার পদ্ধতি

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে বাংলাদেশে। এই কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সার্পোট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এই কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম/সিডিএম/সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।

ডিজিটাল ব্যাংকে গ্রাহক হিসাব খোলা হবে কেওয়াইসি পরিপালন করে অনলাইনে। হিসাব খোলার পর ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহক। নিজের অ্যকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে একই পদ্ধতিতে।

লেনদেন সহজ করতে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউ আর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসরমান প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে ডিজিটাল ব্যাংক।

বৈদেশিক লেনদেন হবে সীমিতভাবে

বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিমালায় অথোরাইজড ডিলার (এডি) লাইসেন্স নেয়ার সুযোগ রয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকের। লেনদেনের সব রেকর্ড সংরক্ষণ করে বৈদেশিক মুদ্রায় ফরেন ট্রেড ও গ্যারান্টি সার্ভিস ছাড়া সাধারণ লেনদেন করতে পারবে এ ধরনের ব্যাংক।

ডিজিটাল ব্যাংক কারও পক্ষে পেমেন্ট বা পরিশোধকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। বিদেশে লেখাপড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অনুমোদন সাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবে গ্রাহকের পক্ষে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে পারবে না এ ধরনের ব্যাংক।

এর বাইরে এ ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। প্রান্তিক ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে নীতিমালায়।

ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত জামানত রেখে ঋণ দিতে পারবে। ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।

আইসিটি গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক থাকতে হবে

ডিজিটাল ব্যাংকের পর্ষদে কমপক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ সদস্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশিষ্ট সদস্যদের ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ডিজিটাল ব্যাংকের শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো ও অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে। কমপক্ষে ‘টিয়ার থ্রি’ মানের ‘ডেটা সেন্টার’ এবং ভিন্ন সিসমিক জোনে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) থাকতে হবে।

ডিজিটাল ব্যাংক ক্লাউড পরিষেবা নিতে পারবে, তবে ক্লাউডের অবস্থান অবশ্যই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হতে হবে।

সকল লেনদেনের তথ্য অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এনক্রিপ্টেড হতে হবে। আইসিটি অবকাঠামো অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করাতে হবে।

গ্রাহকের কাছ থেকে এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাংক চাইবে না, যা গ্রাহকের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরুর ৫ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে এখানে শর্ত দেয়া হয়েছে, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা প্রাথমিক মূলধনের কম হতে পারবে না।

অর্থাৎ আইপিও’র মাধ্যমে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা বা ওই সময়ে উদ্যোক্তাদের সরবরাহকৃত অর্থের সমপরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার ছাড়তে হবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

উদ্যোক্তাদের শেয়ার ৫ বছরের আগে হস্তান্তর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ বছরের আগে অনুমোদন দিতে পারবে না।

ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রচলতি নীতিমালা মানতে হবে

ডিজিটাল ব্যাংকের বেলায় কিছু বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করতে হলেও ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রচলতি নীতিমালার সবই মানতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রচলিত ব্যাংকের মতই ব্যাসেল-৩ অনুসরণ, সিএসআর নীতি মানা, ঋণ আমানত অনুপাত, খেলাপি ঋণের শ্রেণিকরণ, বিধিবদ্ধ জমা, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ, ক্রেডিট রিস্কসহ যাবতীয় নিদের্শনা মেনে চলতে হবে। এছাড়া সময়ে সময়ে যেসব নির্দেশনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করবে, তাও মানতে হবে।

ডিজটাল ব্যাংকের নীতিমালায় উল্লেখ না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়া হয়নি, এমন কোনো কার্যক্রমে ব্যাংক নিয়োজিত হতে পারবে না- কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাখ্যায় তা জানিয়েছে।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102