শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কি কলকাঠি নাড়ছেন?

দেওয়ান ফয়সল
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩
  • ১৯৯ এই পর্যন্ত দেখেছেন

বেশ কিছুদিন যাবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মি: পিটার হাসের কার্য্যক্রম বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকমের জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি করেছে। তার কার্য্যক্রম দেখে অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশ কি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য? নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে যে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের মধ্যে যে দরকষাকশি চলছে সেটা আমাদের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। এ ব্যাপারে নাক গলানো অন্য কোন দেশের উচিত নয়। দেশের জনগণই ঠিক করবে, কোন পথে এগুলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে। তাদের মনে রাখা উচিৎ, আমাদের দেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি: পিটার হাস ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে অবাধ ও সুষ্টু ভাবে নির্বাচন করার তাগিদ দিয়েছেন। সরকারী দলের সাথেও আলাপকালে তিনি বলেছেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আওয়ামী লীগ দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম থেকে বলেই আসছেন, দলমত নির্বিশেষে আসুন আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করি। আপনাদেরকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, এই নির্বাচন হবে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না, এই সিদ্ধান্তের ওপর অটল রয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, আমরা সংবিধান মেনেই নির্বাচন করবো, সংবিধানের বাইরে যেতে পারবো না।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঈদের পর আমরা আমাদের রাজনৈতিক জোট নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবো, এ সময় এ সরকারকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। এই জোটের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত সহ তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোও জড়িত। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় নেতার পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরণের হুঙ্কার দেয়ার পেছনে রহস্য কি? তাদের পেছনে কোন শক্তি কাজ করছে? একটি প্রধান বিরোধী দলের নেতার এ হুঙ্কার কি রাষ্ট্রদূত মি: পিটার হাসের কর্ণগোচর হয় নি? এ ব্যাপারে তিনি নীরব কেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মতে, রাষ্ট্রদূত মি: পিটার হাস ড. ইউনুস, হিলারী ক্লিনটন বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন, যারা ১৯৭১’ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে হত্য করে, দেশ ছাড়া করে, মা বোনের ইজ্জত লুন্টন করে। এ সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে তারা অবস্থান নেয, ভারত মহাসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায় বাঙালীদের দমন করার জন্য। তারপরও কোন কাজ হয়নি। বীর বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো, সেই অস্ত্র দিয়েই ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে বাধ্য করে নি:শর্ত ভাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে।

পাকিস্তানকে সাহায্য করতে গিয়ে পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার মতো একটি বৃহৎ শক্তিও মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পনের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে, এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? এই অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিসিঞ্জার সাহেব বলেছিলেন ”বাংলাদেশ ইজ এ বটমলেস বাসকেট” অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি তলা বিহীন ঝুড়ির রাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের এই ক্ষোভ এখনও মেটেনি এবং কোনদিন মিটবে বলেও মনে হয়না। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব সময়ই বিভিন্ন ধরণের মিথ্যচার ছড়িয়ে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধার সৃণ্টি করছে। বাংলাদেশের মানুষ তা ভাল করেই জানে।

মি: পিটার হাসও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বড় ধরণের একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছেন। মি: পিটার হাস যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশের উন্নয়ন চাইতেন তাহলে, বিএনপি এবং তাদের জোট বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের যে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছে তিনি অবশ্যই এ ব্যাপারে একটা কিছু বলতেন। তিনি তাদেরকে বলতে পারতেন, আপনারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুন। সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। সরকার আরও বলেছে তারা বিভিন্ন দেশকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন পর্য্যবেক্ষণ করার জন্য। সুতরাং নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় কি না তা আমরা সবাই মিলে দেখবো। এই আশ্বাস যদি বিএনপিকে তিনি দিতেন তাহলে তারা অবশ্যই আন্দোলনের পথে না গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হতো। কিন্তু তিনি তা করেন নি। এতে প্রমাণ হয় দেশের বিরোধী দলগুলোর পেছনের শক্তি আমেরিকাই।

মি. পিটার হাসের এ ব্যাপারে যে কর্ম তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হয়, তিনি একদিকে যেমন সরকারকে খুশী রাখছেন অন্যদিক তাঁর পোষ্য দলগুলোকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন যা দেশবাসীর কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং তা দেশকে অস্থিরতার দিকেই ঠেলে দেয়ার নামান্তর।

তবে যাই হোক, সরকার দেশের উন্নয়নে বাধা দানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকি-ধুমকি উপেক্ষা করে সম্প্রতি বাংলাদেশ দারিদ্য বিমোচনের লক্ষ্যে আন্তরিক ভাবে যে কাজ করে যাচ্ছে তারই একটি চিত্র জাতিসংঘের চরম দারিদ্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার এর রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরলাম।

গত ৩১ মে সুরমা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে, দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি করেছে সেটিকে ”ভঙ্গুর” বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের চরম দারিদ্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার। এই সংবাদটির কিছু অংশ এখানে তুলে ধরলাম। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হবার পর মজুরি বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মি. শ্যুটার বলেন, বাংলাদেশের উচিত মজুরি বাড়ানো যেন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সুবিধা পেতে দেশটির জনগোষ্ঠিকে দারিদ্রের মধ্যে রাখতে না হয়। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক একটি জরিপে দারিদ্র্য কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
”সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে। এর ফলে হঠাৎ কোন বিপদ এলে সেটা মোকাবিলা করার মতো অবস্থা তাদের নেই।” ”অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে এলেও তাদের টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তাদের অর্থ সঞ্চয় বা পূঁজি জমানোর সক্ষমতা নেই। ধাক্কা সামলানোর মতো কোন সম্পদ তাদের নেই। ফলে এই অগ্রগতিকে ”ভঙ্গুর” বলেন মি. শুট্যার।

মি. শুট্যারকে বাংলাদেশ সম্পর্কে উরোক্ত রিপোর্টের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে, তিনি এ কথা বলেছেন, ”সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে।” আমাদের দেশে তাঁর অবস্থানকালীন সময়ে নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের কল্যানে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, দেশের দারিদ্র মানুষগুলোর দারিদ্রতা দূর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ, গ্রামে গঞ্জে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান সহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। দেশের উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনৈতিক দলগুলোর বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কথা অবশ্যই মি. শুট্যারকে মানতে হবে যে, আমাদের দেশের মানুষ যখন চরম দারিদ্য থেকে দারিদ্য সীমার উপরে উঠে এসেছে তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই দেশ থেকে দারিদ্যতা দূর হবে। এছাড়াও মজুরী বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি যে বলেছেন তা অবশ্যই বাড়ানো হবে তবে, তা সময়ের দরকার। দেশের গ্রামেগঞ্জে যখন ব্যবসা বাণিজ্য, কলকারখানা ইত্যাদি যখন গড়ে উঠতে শুরু করেছে তখন মানুষের কর্মসংস্থান হবে, মজুরি বাড়বে তাহলে তাদের আর কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়, এটা তো মানতেই হবে। মি. শুট্যার ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হবার পর সরকারকে কি করতে হবে তার যে একটা রূপরেখা দিয়েছেন এ জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

আমেরিকা সহ বিশ্বের সব দেশই দেখছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে তা যদি আরও কয়েক বছর একনাগারে চলে তাহলে অচিরেই বাংলাদেশ সবদিকে দিয়ে একটি উন্নত স্বনির্ভর দেশ হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করবে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই।

লেখকঃ দেওয়ান ফয়সল, কলামিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102