রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহা (৪৮)। চাকরির সুবাদে রাজউকে সেবা নিতে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন তিনি। পরে পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রজেক্টে প্লট পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক আরো গভীর করতেন। সখ্যতা গভীর করতে পরিচিত নানান লোকের বাসাবাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। বিত্তশালী এবং অভিভাবকহীন ওই নারীদের সরলতার সুযোগে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতেন। এভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন রাজউক কর্মচারী দেবাশীষ। শুধু নারী নয়, অনেক বিত্তশালী লোককেও ফাঁদে ফেলতেন তিনি। অফিসে তার দাফটে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।
টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করে হুমকি দিতেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে টয়োটা নোহা মডেলের (ঢাকা মেট্রো : চ ১৯-৯৭৫২) গাড়ির ফিটনেস সনদ ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়। ডিবি বলছে, ১০ জনেরও বেশি নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দেবাশীষের। সবার কাছ থেকেই সে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা তানজিলা সুলতানা (ছদ্মনাম) নামে এক নারী রাজউক কর্মচারী দেবাশীষের মাধ্যমে সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। ওই নারীর সমস্যা এবং সরলতার সুযোগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে দেবাশীষ। ওই নারীর বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের জমিজমা ও প্লটসংক্রান্ত কাজে দেবাশীষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের বিভিন্ন সময় ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এর মধ্যে রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই নারীর মালিকানাধীন ২টি ফ্ল্যাট বিক্রয় করে ২ কোটি ষাট লাখ টাকা, ওই নারীর কাছে থাকা ১৫০ ভরি স্বর্ণ বিক্রয় করে এক কোটি বিশ লাখ টাকা, একটি প্লট বিক্রি করে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রয় করে ৫০ লাখ টাকা, এলিয়ন প্রাইভেটকার গাড়ি বিক্রয় করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে মন্দিরের প্লট পূর্বাচলে বরাদ্দ করে দেবে জানিয়ে ৫০ লাখ টাকা, ওই নারীর আরেক বন্ধুকে প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা, ঝিলমিল প্রজেক্টে তার নিজের নামে প্লট আছে জানিয়ে সেটি বিক্রির নামে আরেকজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে ওই নারী ও তার বন্ধু এবং অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোট ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে আরো বেশ কয়েকজন নারীকে ফাঁদে ফেলে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ।
এ বিষয়ে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, একটি প্রতারণা মামলার সূত্র ধরে রাজউকের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে প্রতারণার বিষয়টি সে স্বীকার করেছে। আমরা তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করছি।
নিউজ /এমএসএম