৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালি ভূমিকম্পের ১৩৫ ঘন্টা পার হলেও তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। দুই দেশে এখনও পর্যন্ত ২৯ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই ধ্বংসযজ্ঞের পুরো চিত্র এখনো পরিষ্কার না। জাতিসংঘের ত্রাণ এবং পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস দাবি করেন, উদ্ধার অভিযান শেষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে দ্বিগুণ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে মার্টিন জানিয়েছেন, এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে যত দেহ চাপা পড়ে আছে, তা উদ্ধার করা গেলে মৃত্যুর সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৫০ হাজার।
শনিবার দক্ষিণ তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরে এসে পৌঁছেছেন মার্টিন। যে কাহরামানমারাস প্রথম কম্পনের উৎসস্থল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রথম ভূমিকম্পের উৎসস্থলের খুব কাছে দাঁড়িয়ে মার্টিন বলেন, এখনই সঠিক সংখ্যা বলে দেয়া খুব কঠিন। আমাদের ধ্বংসস্তূপের তলায় পৌঁছাতে হবে। তবে আমি নিশ্চিত, তখন এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত তুরস্কে ২৪ হাজার ৬১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে সিরিয়ায় উদ্ধার হয়েছে ৪ হাজার ৫০০টি মরদেহ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার উদ্ধারকারীরা। ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে প্রাণের সাড়া পেলেই ছুটছেন সদলবলে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে জাতিসংঘ বলছে, ভূমিকম্পের পরে সিরিয়ায় ৫৩ লাখেরও বেশি মানুষ এই মুহূর্তে গৃহহীন অবস্থায় খোলা আকাশের তলায় রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। তুরস্কের কথা ধরলে সেই সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পাবে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রায় এক কোটি মানুষের রান্না করা খাবারের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, দুই দেশ মিলিয়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ ভূমিকম্পে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন অন্তত সাড়ে চার কোটি ডলারের।
কয়েকটি উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, গত সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দক্ষিণ তুরস্কে সংঘর্ষের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। এখন জীবিত আছেন এমন কাউকে উদ্ধারের ব্যাপারে অনেকটা আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
জার্মান উদ্ধারকারী দল এবং অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী স্থানীয় সময় শনিবার অনুসন্ধান অভিযান স্থগিত করেছে বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও সংঘর্ষের কারণ জানাননি উদ্ধারকারীরা।
একজন উদ্ধারকারী বলেছেন, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিরাপত্তা আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, প্রায় ৫০ জনকে লুটপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বন্দুকও জব্দ করা হয়েছে। যে কেউ আইন ভাঙলে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করবেন বলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন।
তুর্কি কর্তৃপক্ষ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারস থেকে ছয় শিশুকে উদ্ধার করেছে। এসব শিশুকে রাজধানী আঙ্কারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব শিশুদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, এখন তাদের পরিবারকে খোঁজা হচ্ছে। এসব শিশুরা বর্তমানে আইসিইউতে আছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া না পর্যন্ত তারা আইসিইউতে থাকবে। এ সময় তাদের দেখাশোনা করবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পালক মায়েরা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটি গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার।
নিউজ /এমএসএম