ইউকেবিডিটিভির অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এক খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয় বলেই জনগণের চরম দুর্দিনে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তটি গণবিরোধী এবং অবিবেচনা প্রসুত।
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য দেখে প্রথমে একটি কথাই বলতে চাই, এ সরকার যদি জনগণের সরকার না হতো তা হলে একাধারে ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না এবং দেশকে আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে পারতো না। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো সন্তুষ্টি প্রকাশ করে অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং দেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জনাব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ ধরণের বক্তব্য দেখে আমার মনে হচ্ছে, তিনি কচি বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের যেমন নিজের আশেপাশে কি ঘটছে বোঝার মতো কোন জ্ঞান থাকেনা,তাদের মা বাবা অথবা বড়দের সাথে তাদের খুশী মতো কথা বলে আনন্দ পায় এবং সেই সাথে বড়ড়াও আনন্দ পায় ঠিক তেমনি।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন রাজনীতিবিদ, বিএনপি’র মহাসচিব, কি যোগ্যতা নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব নির্বাচিত হলেন তা-ই ভাবতে আমার অবাক লাগে!
তার এসব বক্তব্য শুনে দেশের যারা গুণীজন আছেন তাঁদের হাঁসারই কথা, যার দুনিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে কোন খোঁজ খবরই নেই। বর্তমানে বৃটেন , ইউরোপ, আমেরিকার জনগণ কি ভাবে দিন কাটাচ্ছে, তা তিনি জানেন না। যদি জানতেন, তাহলে একজন অজ্ঞ মানুষের মতো জনগণের সামনে এ রকম বক্তৃতা দিতেন না। আমি জানি মহাসচিব মহোদয়ের এ সব খবর জানা না থাকলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের (আমাদের দেশের) জনগণের সে জ্ঞান আছে, সারা বিশ্বের খবর তাদের নখদর্পনে। সুতরাং ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে জনগণকে ফুসলানো যাবে না বরং নিজের ক্ষতি নিজেরাই করবেন।
তিনি হয়তো জানেন না, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। সম্প্রতি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি) এর নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে এখন প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন প্রতিদিন খাবার এড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা উপোষ থাকছেন। ওপিনিয়ামের একটি এমআরপি পোল থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করে যে, জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকায় অর্ধেকেরও বেশি ব্রিটিশ মানুষ গরম, গরম জল এবং বিদ্যুতের খরচ কমিয়ে দিচ্ছে এবং ১২ জনের মধ্যে একজন পরিবারের বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতি ১০% এ চলমান থাকায়, সর্বসাম্প্রতিক মতামত জরীপে দেখা গেছে যে, প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন খাবার এড়িয়ে যাচ্ছেন কিন্তু সারা দেশে প্রায় ৫০টি নির্বাচনী এলাকায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনে তা বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বার্মিংহাম লেডিউড হল নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক এক বেলা খাবার ছাড়া দিন কাটাচ্ছেন- এই হার ১৯%, তারপরে ডান্ডি ওয়েষ্টে ২৭% , গ্লাসগো ২৪% এবং রোন্ডডায় ২৪%। জনগণের এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য টিইউসি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা বলছে, মুদ্রাস্ফিতীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ধরণের বেনিফিট এবং বেতন বাড়ানোর জন্য।
এদিকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে গত ডিসেম্বর মাস থেকে মুদ্রাস্ফীতি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি বিলের উর্ধগতির কারণে জীবন যাত্রার একটি মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি এখন গোটা দেশ এবং দেশের মানুষ। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ব্রিটেনে শুরু হয়েছে রেল ধর্মঘট, হাসপাতালের নার্সদের ধর্মঘট যার ফলে জনজীবনে চলছে চরম দুর্ভোগ।
অন্য এক খবর প্রকাশিত হয়েছে, ২০২৩ সালের জন্য আইএমএফ এর সতর্কবার্তা- ”আসছে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মন্দা” খবরে বলা হয়েছে, শুধু যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপ নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই আসতে চলছে মন্দার অভিঘাত। “ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক’ শীর্ষক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) তেমনি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ”২০২৩ সালে একটি মারাত্মক মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি।”
আমরা যারা ব্রিটেনে বসবাস করছি, আমরা দেখছি জনগণের দুর্ভোগ। একটি উন্নত দেশে থেকেও প্রতিটি মানুষ ভীষণ দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে অথচ চাকুরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে না। একদিকে যেমন জিনিস পত্রের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি বেড়ে গিয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গ্রোসারীতে জিনিষপত্রের দাম, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহ জ্বালানী খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে রেষ্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে। এ ভাবে যদি কয়েক বছর চলতে থাকে তাহলে ব্রিটেনের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে এ কথা অনস্বিকার্য্য। এ অবস্থা শুধু ব্রিটেনেই নয়, ইউরোপ, সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও।
সারা বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে দেশ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল সহ সারা দেশে শত শত ব্রিজ নির্মান সহ ব্যবসা বনিজ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ করে এগিয়ে চলার সফলতা দেখে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মুগ্ধ হচ্ছে। এ কারণেই বিশ্বের মোড়ল দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের বাংলাদেশে পদচারণা শুরু হয়ে গেছে।
তারা বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশকে যদি সবদিক দিয়ে সাহায্য করা যায়, তাহলে এদেশ অচিরেই একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাদের এ দৃঢ় বিশ্বাস আছে বলেই তারা বাংলাদেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে শুরু করেছে।
ইউকে বিটিভি ডট কম নিউজ পোর্টলের খবরে প্রকাশ, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত ১৬ই জানুয়ারী সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সংস্থাটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ এই আশ্বাস দেন।
আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং উচ্চ আয়ের দেশে প্িরণত হতে চায়। এই আকাঙ্খা পূরণে আইএমএফ পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে। আমি এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এসেছি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাক্ষাতের পর সংস্থাটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্বাহী বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ বলেন, সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রোববার অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের। কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।
এছাড়াও জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডোনাল্ড লু । ১৪ জানুয়ারী রোববার রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হয়েছে বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ এবং শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে।
সর্বত্রই মানুষের অনুধিকার নিয়ে আলোচনা করে গেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডোনাল্ড লু। আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ। এখানে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, যাতে মানুষের আকাঙ্খার সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটে।
অবশ্য ঢাকার তরফে মার্কিন মন্ত্রীকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার আন্তরিক বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র্যাবের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি পুনর্বহাল এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ফেরতের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসন খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মুক্তভাবে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা এবং এক বা সম্মিলিত ভাবে মতামত, আইডিয়া কিংবা চিন্তা জনসমক্ষে শেয়ার করার স্বাধীনতার পক্ষেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্যের মাঝামাঝি সালাম দিয়ে শুরু করা বক্তব্যে ডোনাল্ড লু বাংলায় বলেন, মনোমুগ্ধকর নদীমাতৃক এবং অতিথিপরায়ন মানুষের দেশ বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। আমি এখানে এসেছি, আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে, যখন বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম চলছে।
আইএমএফ এর উপ- পরিচালক অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডোনাল্ড লু দু’জনেই বলেছেন বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যেই তাদের সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অন্যান্য উচ্চ পর্য্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে উভয়েই যে বার্তা দিয়ে গেলেন তা হচ্ছে,”আমরা আপনাদের সাথে আছি, দেশকে এগিয়ে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যান।”
বিএনপি’র এখন বুঝা উচিৎ, স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত আর ভারাটিয়া বার্গম্যানদের মতো লোকদের দিয়ে কোন কাজ হবে না। তাদের মোড়লরাই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসে বন্ধুত্বের হাত মজবুত করার তাগিদ দিচ্ছেন।
দেশের স্বাধীনতা রক্ষা এব্ং জনগণের আস্থা পেতে হলে মিথ্যাচার ছেড়ে দিন। সুন্দর বক্তব্য রাখেন যাতে জনগণ আপনাদের পাশে থাকে। অন্যথায় রাজনীতির আস্তাখুড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া আপনাদের কোন গত্যান্তর নেই।
লেখকঃ দেওয়ান রফিকুল হায়দার (ফয়ছল), কলামিষ্ট, সিনিয়র সাংবাদিক ও সদস্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব