শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

জাতিসংঘের ৩ সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন মৌলভীবাজারের মুহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ২১০ এই পর্যন্ত দেখেছেন

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএসের এক্সিকিউটিভ বোর্ডের ২০২৩ সালের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন।

অন্য ভাইস-প্রেসিডেন্টরা হলেন কোস্টারিকা, ইউক্রেন এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত। এটি বাংলাদেশকে বোর্ডের অন্যান্য সদস্য এবং জাতিসংঘের এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে ও তাদের কাজের কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম করবে।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এ তথ্য জানায়।

ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএসের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে জাতিসংঘের উন্নয়ন এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ম্যান্ডেট রয়েছে। ইউএনডিপি দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রাথমিক ফোকাসসহ জাতিসংঘের বৃহত্তম সংস্থা।   ইউএনএফপিএ জনসংখ্যা এবং পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো কাভার করে। আর ইউএনওপিএস শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবিক বিষয়ে কাজ করে।

রাষ্ট্রদূত মুহিত জাতিসংঘ শান্তি বিল্ডিং কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং গত বছর জাতিসংঘ-নারীদের নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিতের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। মোহাম্মাদ আব্দুল মুহিত ১৯৯৩ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। কূটনৈতিক জীবনে তিনি নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, কুয়েত, রোম, দোহা, ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ডেনমার্কে রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ডেনমার্কে তিনি বেশ সুনামের সাথে কাজ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করেন। বিবাহিত জীবনে মুহিত দুই সন্তানের জনক। তিনি বর্তমানে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে বসবাস করছেন।

রাষ্ট্রদূত মুহিতের বাবা মো. আব্দুল গফুর ছিলেন শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সেই সুবাধে বাবার স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন আব্দুল মুহিত। ১৯৮০ সালে এই বিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ভর্তি হন সিলেট মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজে। ১৯৮২ সালে এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

কূটনীতিক আব্দুল মোহিতের গর্বিত মা জুলেখা খাতুন থাকেন শ্রীমঙ্গল শহরে। বাবা আব্দুল গফুর ১৯৭৫ সাল থেকে শ্রীমঙ্গল শহরে বসবাস শুরু করেন। শ্রীমঙ্গলের জনিপ্রয় এই শিক্ষক ও মুহিতের বাবা মারা গেছেন ২০১২ সালে। তাদের পৈত্রিক ভিটা একই উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের সিরাজনগর এলাকার লামুয়া গ্রামে। সেখানেই মুহিতের জন্ম । দুই ভাইয়ের মধ্যে মুহিত ছোট। বড় ভাই আবদুল মুকিত আমেরিকায় স্বপরিবারে বসবাস করেন। তিনি একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। আব্দুল মুকিত বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেন।

কূটনীতিক মোহাম্মাদ আব্দুল মুহিতের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে আনিকা মুহিত আমেরিকায় ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। বিয়েও হয়েছে সেখানে। এখন তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ছোট মেয়ে জিহান মুহিত ক্লাস টেনে পড়ছে। বর্তমানে কোপেনহেগেনে মা-বাবার সাথে বসবাস করছেন।

সফল এ কূটনীতিকের সাথে  মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটা যেন আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারি। দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

মুহিত আরো বলেন, শ্রীমঙ্গলের একজন মানুষ হিসেবে আমি গর্বিত। শুধু শ্রীমঙ্গল কেন, পুরো দেশটাই আমার। তবুও নিজের জন্মভূমির জন্য আলাদা ভালোবাসা থাকবে। শ্রীমঙ্গলের একটা ঐতিহ্য আছে, আমি যেন সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারি।

কূটনীতিক মুহিত বলেন, আমি যে দায়িত্বে আছি, এখান থেকে দেশসেবার অনেক সুযোগ আছে। সেটা যেন খুব ভালোভাবে করতে পারি। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের সেবা করতে চাই। শ্রীমঙ্গল তো আমার হৃদয়েই আছে।

শিক্ষক ‍পিতা সম্পর্কে আব্দুল মুহিত বলেন, আমার যতটুকু অর্জন তার সবটুকু আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। আমার বাবা সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। গ্রামে থাকতেন। খুব স্বচ্ছল ছিলেন না। কিন্তু বাবা বড় স্বপ্ন দেখতেন। বলতেন পড়ো এবং বড় হও। ১৯৫৫ সালে বাবা সিলেট এমসি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। বাবা স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার দেখানো পথেই এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

শ্রীমঙ্গলের ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন জনপ্রিয় শিক্ষকের সন্তান ও বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনওপিএসের এক্সিকিউটিভ বোর্ডের ২০২৩ সালের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা তথা শ্রীমঙ্গলের ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষকবৃন্দ, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102