বাংলাদেশে চার দিনের বেশ ব্যস্ত একটি সফর সম্পন্ন করে গেলেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এলিন লোবাচের। তার সফরের সময় ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যয়ের পাশাপাশি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হয়নি এলিনের। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতের কথা শোনা গেলেও তা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সূচির কারণে মার্কিন প্রতিনিধিকে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় দেওয়া যায়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি শিডিউলে ছিল না বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে এলিন লোবাচেরের সফর সম্পর্কে এক পোস্টে বলা হয়, এলিন ও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। তারা রোহিঙ্গা, জাতিসংঘের সংস্থা, এনজিও এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। মার্কিন প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিজ) আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার, শাসন এবং নিরাপত্তা নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সফর দুদেশের সম্পর্ক জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের দিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদশি বংশোদ্ভূত তরুণ সৈয়দ আরিফ ফয়সাল হত্যার ঘটনার তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মন্ত্রণালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সচেতন নাগরিক সমাজের মানববন্ধন নিয়েও অস্বস্তিতে ছিল মার্কিন প্রতিনিধি দল ও মার্কিন দূতাবাস। তারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখালে বৈঠকটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
আরও জানা গেছে, গত সোমবার রাতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে একটি সংবর্ধনায় অংশ নেন এলিনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দল। সেখানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
এদিকে সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলো সূত্রে জানা গেছে, বৈঠক বেশ আন্তরিক ও ইতিবাচক হয়েছে। দুদেশের মধ্যকার টানাপড়েনের কোনো ছাপ ছিল না। বরং সম্পর্ক আরও নিবিড় করার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে দুপক্ষেরই। এ সফরে ওয়াশিংটনের প্রাধান্য ছিল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)। আর ঢাকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে র্যাব ও কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি। মার্কিন প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধিরাও বন্ধুসুলভ পরামর্শ দিয়ে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধি দল বৈঠকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাকুইজিশন ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ) নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।
এ ছাড়াও বাইডেনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধির এ সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন, উন্নয়ন সহযোগিতা, সমুদ্র নিরাপত্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো শক্তিশালীকরণ, সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। আজ মঙ্গলবার সফর শেষে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন তারা।
নিউজ /এমএসএম