চোরাকারবারীদের কাছ থেকে জব্দ করার পর থানায় রাখা প্রায় ২০০ কেজি গাঁজা ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে। ইঁদুরের গাঁজা খেয়ে ফেলার এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশে। বুধবার আদালতকে এই তথ্য জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
জব্দ করা গাঁজা প্রমাণ হিসেবে আদালতের কাছে উপস্থিত করার নির্দেশ দেওয়া হলে পুলিশ আদালতকে এই তথ্য জানায়। এ নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের আদালতও বলেছে, ‘ইঁদুর ক্ষুদ্র প্রাণী এবং পুলিশের ভয় নেই তাদের। ইঁদুরের হাত থেকে মাদক রক্ষা করা কঠিন।’
মাদক চোরাচালানের একাধিক মামলায় আদালত পুলিশকে তথ্য প্রমাণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের বিচারক তিনটি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন, যেসব মামলায় ইঁদুর গাঁজা ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিচারক সঞ্জয় চৌধুরী এক আদেশে বলেছেন, ‘‘আদালত পুলিশকে জব্দকৃত মাদক প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করতে বললে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯৫ কেজি গাঁজা ইঁদুর ‘ধ্বংস’ করে ফেলেছে।’’
উত্তরপ্রদেশে জব্দ করা ৩৮৬ কেজি গাঁজার বিষয়ে দায়ের করা অপর এক মামলায় পুলিশ আদালতের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে পুলিশ বলেছে, ‘কিছু’ গাঁজা ‘ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে’।
বিচারক চৌধুরী বলেছেন, পুলিশের জব্দ করা প্রায় ৭০০ কেজি গাঁজা মথুরা জেলার থানায় পড়ে ছিল। আর এসব গাঁজা ইঁদুরের আক্রমণের ঝুঁকিতে ছিল।
তিনি বলেন, ইঁদুর অত্যন্ত ছোট প্রাণী হওয়ায় তা মোকাবিলায় পুলিশের অভিজ্ঞতা ছিল না। জব্দকৃত গাঁজা ‘এই ধরনের ভয়-ডরহীন ইঁদুরের’ হাত থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় ছিল, গবেষণাগার এবং বিভিন্ন ওষুধ সংস্থা জন্য নিলামে তোলা। নিলামে বিক্রি হওয়া মাদকের অর্থ সরকারের কোষাগারে যায়।
মথুরা জেলার জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এমপি সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, আশপাশের বিভিন্ন থানায় সংরক্ষিত কিছু গাঁজা ‘ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নষ্ট হয়েছে’ এবং সেগুলো ইঁদুর খেয়ে ফেলেনি।
২০১৮ সালে পুলিশের এক গুদাম থেকে আধা টন গাঁজা উধাও হয়ে যাওয়ার জন্য ইঁদুরকে দায়ী করার পর আর্জেন্টিনায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় দেশটির বিশেষজ্ঞরা পুলিশের এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, খাবার হিসেবে ইঁদুরের গাঁজা খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা নেই। কারণ ইঁদুরের বিশাল কোনও দল যদি গাঁজা খেয়ে ফেলত, তাহলে গুদামে প্রচুর মরদেহ পাওয়া যেত।
গাঁজা খেয়ে ফেললে ইঁদুরের শরীরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, তা জানতে ২০১৯ সালে ল্যাবরেটরিতে এক গবেষণা চালানো হয়। এই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরকে যখন গাঁজাযুক্ত ময়দা দেওয়া হয়েছিল, তখন এসব প্রাণী কম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাদের শরীরের তাপমাত্রাও কমে যায়।
২০১৭ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের পুলিশ হাজার হাজার লিটার বাজেয়াপ্ত মদ খাওয়ার জন্য ইঁদুরকে দায়ী করেছিল। এই রাজ্যে মদ বিক্রি এবং সেবন নিষিদ্ধ করার এক বছর পর জব্দ করা মদ ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে বলে সেই সময় জানিয়েছিল পুলিশ। সূত্র: বিবিসি।
নিউজ /এমএসএম