জামালপুর ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী কাঁসা শিল্পটি এক সময় বিশ্ববাসির নিকট ব্যাপক সমাদৃত হয়ে সু-খ্যাতি অর্জন করলেও বর্তমানে সেখানে গুটিকয়েক পরিবার ব্যাতিত এই শিল্প এখন আর দেখা যায় না। বশেফমুবিপ্রবি এর সমাজকর্ম বিভাগের একটি দল বিভাগীয় শিক্ষক অলিউল্লাহ চৌধুরী এবং হুসেইন মাহমুদ আপেল এর নেতৃত্বে এই শিল্প কেন আজ বিলুপ্তির পথে তা সরেজমিনে গবেষণার উদ্দেশ্য সেখানে ফিল্ড ভিজিটের স্থান নির্ধারণ করেন। সেখানে তারা কাঁসা শিল্পের সাথে জড়িত মহাজন এবং কাঁসা শ্রমিকদের সাথে সরাসরি কথা বলেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ইসলামপুরের ফকিরপাড়া গ্রামের কাঁসা শিল্পীরা তাদের পেশাগত শিল্পজীবন পারিবারিকভাবে গড়ে তোলার কারণে ওই এলাকাটি একসময় কাঁসারীপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প একসময় বিশ্ববাজারে অনেক কদর ছিল।
তৎতলীন বৃটিশ সরকার ১৯৪২ সালে লন্ডনের বার্মিংহাম শহরে সারা বিশ্বের হস্তশিল্প প্রদর্শণীর আয়োজন করেছিল। ওই প্রদর্শণীতে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্পের কারিগর স্বর্গীয় জগতচন্দ্র কর্মকার ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী কারুকার্যপূর্ণ কাঁসার তৈজসপত্রাদি প্রদর্শণ করেছিল। ওই প্রদর্শণীতে ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প হিসাবে স্বর্ণপদক লাভ করে।
কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় যে এখন হাতে গোনা ৬ থেকে ৭ টি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত এখন। এক সময় সেখানে সকালে কাঁসা পেটানোর শব্দ নাকি সমস্ত গ্রামে শোনা যেত কিন্তু কালের বিবর্তনে সেটা আজ আর নেই। গত ১৫ বছরে কাঁসার দাম বেড়েছে ১০ গুন। ঊর্ধ্ব মূল্যের কারণে প্রতিযোগীতার বাজারে টিকতে পারছে না এ শিল্প।
বর্তমানে কাঁসা সেখানে বিক্রি হয় ৩২০০ টাকা কেজি দরে। তাদের কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বাইরের দেশ থেকে। ইসলামপুরের কাঁসা শিল্প সমিতির অন্যতম কর্ণধার অঙ্কন চন্দ্র কর্মকার জানান, কাঁসার নানা উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে এজন্য সাধারণ মানুষ আর কিনতে আগ্রহ পান না।
একজন কর্মচারী সাথে কথা বলে জানা যায়,তিনি কাঁসা শিল্পের সাথে একসময় জড়িত ছিলেন কিন্তু এখন আর নেই । তার অটোরিকশা চালক ছেলেকেও তিনি কোনোদিন এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে দিবেন না বলে জানান।
এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প আমাদের দেশের জন্য। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন, নাহলে অচিরেই এই শিল্প একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে, থেকে যাবে ইতিহাস হয়েই।
লেখক: সমাজকর্ম বিভাগ, ২য় বর্ষ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়