খুলনা জেলার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবন কূলঘেষা দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায়,এলাকার শিক্ষার্থীরা দূরে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশুনা করছে।
যার ফলে গ্রামের অনেক শিশু শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকছে। দূরবর্তী এলাকায় বিদ্যালয় হওয়ায় আগ্রহ থাকা অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশীর পাতাখালী গ্রামটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস অথচ গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা ভূমিও দান করেছিলেন। এরপর স্থানীয় লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার ধর্ণা দেন। তারা কেবল শুধু আশ্বাসই পেয়েছেন। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে দূরবর্তী বিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করছে।
দূরবর্তী এলাকায় স্কুল হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনীহা বাড়তে শুরু করেছে দিনের পর দিন। এতে অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
সম্প্রতি ওই এলাকার শিক্ষার্থী সহ অভিবাভকরা বিদ্যালয় পূর্ণ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ।তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে ওই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৯৬ সালে পাতাখালী গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ৩৩ শতক জায়গা দান করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় সেখানে কোনো বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি।
এ কারণে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূরবর্তী দক্ষিণ বেদকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চোরামুখা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে লেখাপড়া করছে।
পাতাখালী গ্রামের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মিম জানায়, গ্রামে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় তারা অতি কষ্টে পায়ে হেটে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে লেখা পড়া করছে। গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় অনেক সহপাঠী দূরের স্কুলে যায় না। অনেকে লেখাপড়াও ছেড়ে দিয়েছে।আমরা আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় চাই। লেখাপড়া শিখে আমরা বড় হতে চাই।
গ্রামের বিদ্যালয় করার জন্য জমি দাতা হায়দার মল্লিক ও ইয়াকুব মল্লিক বলেন, ‘বয়স অনেক হলো। বৃদ্ধ হয়ে গেছি। গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নিজেদের জায়গা জমি কম তার পর ও ১ বিঘা জমি দান করছি, অনেক মানুষের দ্বারে-দ্বারে গেছি। তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মৃত্যুর আগে আমাদের গ্রামে একটি বিদ্যালয় দেখে যেতে চাই।
এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নান মল্লিক বলেন, গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করানোর জন্য আমরা একটি বিদ্যালয় চালু করেছিলাম।সেখানে ৬৫ জন শিক্ষার্থীও ছিল।কিন্তু সুযোগ সুবিধা না থাকায় বিদ্যালয়টি ঠিকমত চলছে না।
গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় আমার সন্তানসহ গ্রামের অনেক শিশু-কিশোর দূরে কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। অনেকে ঝরে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে শিশু-কিশোর ও যুবসমাজ বিপদগামী হচ্ছে।পাতাখালি গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন হলে সু-শিক্ষা গ্রহণ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারবে এলাকার শিশু-কিশোররা।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পাতাখালি গ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রয়োজন। একটি প্রকল্পের আওয়ায় অনেক আগে একটা কমিউনিটি স্কুল ছিল সেই প্রকল্পটি এখন বন্ধ আছে।ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি।দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অতি দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাবেন।