আবু আল কাসেম মো. ফেরদাউস: স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে নবিজি (সা.) যে যুগান্তকারী উপদেশ রেখে গেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সতর্কতা, খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও অস্বীকার করতে পারেনি। নিচে তার কটি উদ্ধৃতি লিপিবদ্ধ করা হলো:-
মহানবি (সা.) উপদেশ দিয়েছেন, কোথাও মহামারি বা কোনো সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে বের না হতে এবং সে স্থানে অনুপ্রবেশ না করতে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে করোনাভাইরাস থেকে জনগণকে সুরক্ষার জন্য ‘লকডাউন’ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় কি?
মুসলমানদের অজুর মাধ্যমে শরীরকে পাকপবিত্র করে ইবাদত বন্দেগি করতে হয়। অজুর শুরুতে প্রথমে হাত উত্তমরূপে ধৌত করতে হয়। তারপর মুখ বা অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পানি দিয়ে ধৌত করা হয়। হাতের মাধ্যমে যে রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে তাই হাতকে উত্তম রূপে ধৌত করার জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপদেশ কী অজুর হাত ধোয়ার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ? তা ছাড়া প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজে যে পরিমাণে শরীর নাড়াচাড়া হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর নয় কি?
প্রস্রাব-পায়খানা থেকে রোগ জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। মুসলমানরা পায়খানা ও প্রস্রাবের পর ইসলামের প্রাকযুগ থেকে যে ঢিলাকুলুফ ব্যবহার হয়ে আসছে তা বর্তমানে ওয়াশরুম বা শৌচাগারের টয়লেট পেপার ব্যবহার তার নতুন সংস্করণ নয় কি?
নির্দিষ্ট বা নিয়ন্ত্রিত যৌনাচার ইসলামে স্বীকৃত। অনিয়ন্ত্রিত বা অবাধ যৌনাচার, বহুগামিতা ইসলাম সমর্থন করে না। সিফিলিস, গণরিয়া ও এইডস ইত্যাদি ব্যাধি অবাধ যৌনচারের ফসল নয় কি?
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত খাদ্য নয়, পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। হালাল-হারাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য নয় কি?
মুখের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে আধুনিক দাঁত ব্রাশ বা মাউথ ওয়াশের সঙ্গে ইসলামের প্রাকযুগ থেকে ব্যবহৃত মেসওয়াক কী অসংগতিপূর্ণ?
নেশা বা মাদক মানবসভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। নেশা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ইসলাম বহু আগে এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মাদকের ভয়াবহতা নিরসনে আধুনিক রাষ্ট্রের ভূমিকা তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় কি?
মধু ও কালিজিরার অন্য গুণাগুণ ও উপকারিতা এবং রোগ ব্যাধি নিরাময়ে এটি যে এক কার্যকরী মহৌষধ তা আজ সর্বজনবিদিত। এ সম্পর্কে নবিজি (সা.)-এর মূল্যবান উপদেশ ও পরামর্শ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কি অস্বীকার করতে পারছে?
শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। শিশুদের সুস্থ ও সবলভাবে গড়ে তুলতে হলে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। আজ থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ বছর আগে ইসলাম শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মায়ের দুধের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে-‘মায়েরা তাদের শিশুদের পূর্ণ দুবছর দুগ্ধ পান করাবে’। মায়ের দুধের উপকারিতা, বিকল্প দুধের অপকারিতা এবং পূর্ণ দুবছর দুগ্ধ পান করানো ইত্যাদি সম্পর্কে নবিজি (সা.)-এর উপদেশ ও পরামর্শ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কি অস্বীকার করতে পারবে?
(লেখক : সাবেক উপাধ্যক্ষ, চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজ)