জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের যেমনি ইহকালীন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি পরকালীন এবং সামাজিক উপকারিত রয়েছে। কেননা জামাতের সাথে নামাজ আদায় হচ্ছে একটি সামাজিক সংগবদ্ধ ইবাদত। এর বহুবিধ ফায়দা ও উপকারিতা রয়েছে ।
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের পরকালীন ফায়দা:
জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআন কারীমে এরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো যাকাত আদায় করো এবং রুকু কর রুকু কারীদের সাথে।’ সূরা বাকারা আয়াত ৪৩।
আয়াতটিতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা`আলা আনহু থেকে বর্ণিত; সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব।’ সহীহ বুখারী ও মুসলিম। ৬১৭।
অন্য আরেকটি হাদিসে জামাতের সাথে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তা`আলা আনহু হতে বর্ণিত; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত প্রথম তাকবীরের সাথে জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুটি পুরস্কার দান করবেন নাম্বার এক, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন নাম্বার দুই, মুনাফিকের খাতা থেকে তার নাম কেটে দিবেন।’ সহীহ তিরমিজি হাদিস নং ২৪১।
জামাত যত বড় হবে সাওয়াব তত বেশি হবে:
হযরত খুবাসা ইবনে কাইস রাদিয়াল্লাহু তা`আলা আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দুই ব্যক্তির জামাতে নামাজ আদায় যার একজন ইমাম হয় এবং অপরজন মুক্তাদী, আল্লাহ তাআলার নিকট চারজনের পৃথক পৃথক নামাজ অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। এমনিভাবে চারজনের জামাতের নামাজ আটজনের পৃথক পৃথক নামাজ অপেক্ষা পছন্দনীয় এবং আটজনের জামাতে নামাজ পৃথক পৃথক ১০০ জনের নামাজ অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। তবরানি বাজ্জার ২ নাম্বার খন্ড ১৬৩ পৃষ্ঠা।
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে:
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা`আলা আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে এবং ওযুকে পরিপূর্ণ রূপে করে। অতঃপর সে শুধু নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার ওপর এরূপ খুশি হন যে রূপ দূরে চলে যাওয়া কোন আত্মীয় হঠাৎ আগমন করলে ঘরের লোকেরা খুশি হয় ‘ সহি ইবিনে খুজাইমা দুই নাম্বার খন্ড ৩৭৪ পৃষ্ঠা।
জামাতে শরিক হওয়ার জন্য দূরে যাওয়ার ফজিলত:
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা`আলা আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাতায়াত করে আল্লাহ তা`আলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন। সুবহানাল্লাহ।’ সহীহ বুখারী হাদিস নং ৬২৯।
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ইহকালীন এবং সামাজিক উপকারিতা:
নাম্বার ১. জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানদের পারস্পরিক আন্তরিকতা বৃদ্ধিপায় এবং সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি হয়।
নাম্বার ২. জামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ধনী গরিব রাজা বাদশা উঁচু-নিচু সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে এর মাধ্যমে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ শত্রুতা দূরীভূত হয় এবং পারস্পরিক ঐক্য সৃষ্টি হয়।
নাম্বার ৩. সমাজের কেউ অভাবগ্রস্ত কিংবা বিপদগ্রস্ত অথবা অসুস্থ থাকলে জামাতে শরিক হওয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক জানা-শোনা হয় এবং একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে।
নাম্বার ৪. মুসলমানদের ঐক্য সংহতি সৃষ্টি হয় যার ফলে মুসলমানদের শত্রুরা সতর্ক হয়ে যায়, সাবধান হয়ে যায়; মুসলমানদের অনিষ্ট করা থেকে। বিরত থাকে সব ধরনের ষড়যন্ত্র থেকে। সর্বোপরি তারা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।
নাম্বার ৫. প্রতিদিন পাঁচ বেলা জামাতে শরিক হওয়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান সামাজিক রীতিনীতি এবং পারস্পরিক মিলেমিশে চলার গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুসলমানকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে ইহকালীন পরকালীন সফলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন আমীন।
লেখক: চেয়ারম্যান, সৃষ্টির কল্যাণে ফাউন্ডেশন।