শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি খায়রুল মজিদের নামে হত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ এই পর্যন্ত দেখেছেন

সাবেক শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছোট ভাই নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ঢাকা ক্লাবের সভাপতি খায়রুল মজিদ মাহমুদ চন্দনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত মো. আরিফের (১৭) বাবা মো. ইউসুফ বাদী হয়ে সোমবার (২৬ আগস্ট) যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০ জনের নামে মামলা হয়েছে। সে মামলায় ৪৯ নাম্বার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রীর ভাই খায়রুল মজিদ মাহমুদ। মামলার এজাহারে তার পাসপোর্ট নাম্বার ইউ০৩২৯৪৪৪ উল্লেখ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চার বার ঢাকা ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া খায়রুল মজিদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিগত নির্বাচনের সময় নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খায়রুল মজিদ চন্দন বলেছিলেন, মনোহরদীতে নৌকার বিরুদ্ধে কাউকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল এবং এখনো সেসব ভিডিও নিয়ে মানুষ সমালোচনা করে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিলেন খায়রুল মজিদ। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়ার পর যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

খায়রুল মজিদ মাহমুদ চন্দন ২০০১ সালে মনোহরদী বেলাবরের আসন থেকে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে মাত্র ৮ হাজার ৮৭০ ভোট পেয়েছিলেন। যেখানে বিএনপির সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল পেয়েছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ৭১৪ ভোট।

খায়রুল মজিদ মাহমুদ তার ভাই নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে শিল্পমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সেই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, খায়রুল মজিদ মাহমুদ তৎকালে সরকারি অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান পানির দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে শতশত কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন।

এবি হাই-টেক নামে একটি টাওয়ার কোম্পানির জন্য বিনিয়োগ করবেন বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ৪৫% শেয়ার লিখে নিয়ে পরে তা সাবেক এমপি আসলামুল হকের নিকট ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করেন। তবে বিক্রির টাকা কোন পার্টনারকে না দিয়ে নিজেই ভোগ করেছেন। অনুকূলে টাওয়ার শেয়ারিংয়ের শেয়ার বাগিয়ে নিয়ে ১৫ কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছেন এবং এই ব্যবসায় তার কোন বিনিয়োগ ছিল না।

খায়রুল মজিদ বনানীর ১১ নং সড়কে ৫৪ নং বাড়িটির একটি ফ্লোরে নিজের অফিস পরিচালনা করেন এবং অন্যান্য ফ্লোর ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা অবৈধভাবে খরচ করেন। তবে এই বাড়িটি তার স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ৫৪ নং বাড়িটির মালিক তার স্ত্রী হলেও এই বাড়ি ভাড়া বাবদ যে টাকা তিনি পান তার কোন হিসাব স্ত্রীকে দেন না।

তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের শিল্পমন্ত্রীর অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে ৪ বার ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। প্রতি রাতে মদপান করে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরেন বলে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এখন তিনি একাই উক্ত ভবনের ভাড়ার টাকা ভোগ করেন। তিনি সর্বত্র প্রচার করনে যে তিনিই এই ভবনের মালিক।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং ঢাকার অভিজাত লোকজনের যেমন বড় বড় ব্যবসায়ী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন আমলারা সেখানে যাতায়াত করতেন, তাই তাদের সহযোগীতায় এবং তার ভাই আওয়ামী লীগ সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী থাকার সুবাদে নামে-বেনামে ভুয়া ব্যবসা-বাণিজ্য করে এবং তদ্বির বাণিজ্যের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কথিত আছে যে তিনি প্রতি রাতে বিভিন্ন ক্লাবে মদপানে এবং জুয়া খেলে লাখ লাখ টাকা অপচয় করেন। যার কারণে তিনি সমাজে অনেক ঋণী ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত।

খায়রুল মজিদ মাহমুদ সব সময় মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, তিনি ঢাকা ক্লাবের সভাপতি থাকার কারণে সমাজের উঁচু শ্রেণীর সকল মানুষের সাথে তার ওঠা বসা। কিনি একসময়ের আইজিপি বেনজিরের নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে হুমকি ধমকি দিয়ে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ যাতে মুখ না খোলে সেজন্য বিভিন্ন বাহিনীর নাম বিক্রি করে সকলের মুখ চাপা রাখতেন।

তার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। এই দুইজন কানাডা ও আমেরিকাতে থাকেন। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে তিনি প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা পাচার করে সেখানে দুজনকেই বাড়ি এবং দামী গাড়ি কিনে দিয়েছেন। ছেলেকে আমেরিকার শেয়ার মার্কেটে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার না থাকলে তার সকল আয় বন্ধ হয়ে উল্টো অবৈধ এবং অনৈতিক লেনদেনের জন্য জেলেও যেতে হতে পারে। তাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি নিজে প্রত্যক্ষ থেকে নিজেদের অস্ত্র দিয়ে লোকজন সঙ্গে নিয়ে ছাত্রদের উপরে নির্বিচারে গুলি করেছেন। তার প্রত্যক্ষ মদদে উত্তরায় বিভিন্ন অংশে অজস্র গোলাগুলি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

খায়রুল মজিদ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাংক ঋণ বা বড় বিনিয়োগ করিয়ে দেবেন এবং সেই বিনিয়োগ পেতে তাকে আগে শেয়ার হোল্ডার করতে হবে বলে প্রকল্পে প্রবেশ করেন। কিন্তু পরে কোন বিনিয়োগ না করে শেয়ারের আনুপাতিকহারে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেই স্বেচ্ছায় শেয়ার বিক্রি করে চলে যান। এভাবে তিনি ঢাকা ক্লাবের সভাপতি এবং তিনি শিল্পমন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে কোথাও যেতে হলে শিল্পমন্ত্রীর গানম্যানকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। মন্ত্রীর এপিএসকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াকিটকিতে কথা বলে নিজের গুরুত্ব বোঝাতেন। এভাবে নানানভাবে প্রতারণা করে মানুষকে পথে বসিয়ে দিতেন। এসব অভিযোগে আগেও তার নামে একাধিক মামলা হয়েছে এবং কারাগারেও যেতে হয়েছে।

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102