স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপি দিয়ে কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমানের কক্ষে গেলে দ্রুত মিটিংয়ের কথা বলে রুম থেকে তড়িঘড়ি বের হয়ে যান তিনি। এরপর আর দিনভর রুমে ফিরেননি সচিব আজিজুর।
রোববার (১৮ আগস্ট) এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানান, সকাল ১০টার দিকে সচিবালয়ের গেটে শতাধিক কর্মকর্তা ব্যানার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে অবস্থান নেন। পরে কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিটি দেন।
জানা গেছে, কর্মকর্তারা সচিবের রুমে গিয়ে তাদের পদোন্নতির বিষয়ে কথা বলার জন্য সময় চাইলেও তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের কথা বলে বের হলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় সচিব মো. আজিজুর রহমান উপদেষ্টার কক্ষে ছিলেন না।
পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা জানান, এ বিভাগের সচিবের স্বৈরাচারী মনোভাব এবং একনায়কতন্ত্রের ফলে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত ডিপিসিসমূহ আলোর মুখ দেখেনি। বারবার ডিপিসি করে সরকারি অর্থের অপচয় করলেও তিনি পদোন্নতি প্রদান করেননি। এর ফলে কর্মকর্তাদের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা সচিবের কক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সচিব তার কক্ষ থেকে কৌশলে বেরিয়ে গিয়ে আর আসেননি।
এক পর্যায়ে সচিবের একান্ত সচিবসহ অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন), যুগ্ম সচিব (প্রশাসন)-কে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা সচিবের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় সচিবকে ‘হাসিনা সরকারের দালাল এবং গণহত্যার সহযোগী’ উল্লেখ করে দ্রুত তার অপসারণ চান।
যোগ্যতা অর্জনের তারিখ থেকে ১৮ তম বিসিএস ও পরবর্তী ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতি যোগ্য সকল কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তিতে সন্তোষজনক চাকুরি এবং ৫ বছরের সময়কাল সমাপ্তিতে সিনিয়র স্কেল প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে; পরিচালক পদে পদোন্নতির ডিপিসি সম্পন্ন হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ জিও জারি করতে হবে।
সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে সহকারী পরিচালক পদে অনতিবিলম্বে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ডিএস (DS) পুলে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে ডিএস (DS) পুলে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
পদোন্নতিতে অযোগ্য না হওয়ার ক্ষেত্র ব্যতীত সিনিয়রকে বাদ দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি-পদায়ন করা যাবে না। এক্ষেত্রে, বিসিএস ব্যাচ ও মেধাক্রম অনুসরণ করতে হবে; বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারের পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন করা যাবে না।
উপজেলা পর্যায়ে সম্পূর্ণ আলাদা দুটি অফিস হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্তৃক ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা’ পদবী ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসনিক শৃঙ্খলার স্বার্থে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদ থেকে ‘পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা’ অংশটুকু বাদ দিতে হবে; বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধিতাকারী এবং স্বৈরাচারের দোসর কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে অধিদফতর থেকে অপসারণ ও বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে হবে।
কে এই সচিব আজিজুর রহমান
মো. আজিজুর রহমান বয়াতি সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৯৯৪ (ত্রয়োদশ) ব্যাচের একজন সদস্য। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ও মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৮ সালে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির নেপথ্যে থাকা আমলাদের মধ্যে অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলে এই প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা আছে।
অভিযোগ আছে, নিজ ব্যাচ ও সিনিয়র অনেক ব্যাচকে ডিঙিয়ে সচিব পদে পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার দুর্নীতি ও প্রভাবের কারণে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি দীর্ঘদিন। ফলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের প্রত্যেকটি অধিদফতরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এ বিভাগের আওতায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর গত এক বছর ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীসহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ঔষধের সংকটে রয়েছে।
অভিযোগ আছে, সচিবের পছন্দের কোম্পানি কাজ না পাওয়ায় কোনো টেন্ডারই আলোর মুখ দেখেনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকাকালীন তিনি গৃহায়নের প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিউজ /এমএসএম