শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

পরিস্থিতি কি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে?

বিশেষ প্রতিবেদেক
  • খবর আপডেট সময় : রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ২৭ এই পর্যন্ত দেখেছেন
অবশেষে এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার শহিদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সরকারের পতন ছাড়া তারা ঘরে ফিরে যাবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। আর আজ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ছাত্ররা। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাহলে কি পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে? সরকার এখন কি করবে-এসবই এখন সারাদেশে আলোচনার বিষয়।
বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, সামান্য কোটা সংস্কারের দাবি থেকে আজকের এই এক দফা আন্দোলনের পিছনে যেমন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী শক্তির হাত আছে, তেমনি সরকারের কিছু সিদ্ধান্তহীনতা এবং বিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সবকিছুকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও দায়ী। প্রথম থেকেই সরকার যথাযথভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে যখন প্রজ্ঞাপন দেওয়া হল, তখনই সমস্যা মিটে গিয়েছিলো৷ কিন্তু ২০১৮ সালের এই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে তিন বছর পর একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। তখন সরকার এই রিট পিটিশনের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখায়। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ছিলো নির্লিপ্ত। আইন মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তখন কেন এই নির্লিপ্ততা ছিলো? তখনই যদি এই প্রজ্ঞাপনটির বিরুদ্ধে রিট পিটিশনের ব্যাপারে সরকার শক্ত অবস্থান নিতো, তাহলে পরে আজকের পরিস্থিতি হতো না বলে অনেকে মনে করেন। এখানে আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের ব্যর্থতা সীমাহীন।
কোটা আন্দোলন যখন আস্তে আস্তে শুরু হলো তখনও আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে এবং চরম উদাসীনতা করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। হাইকোর্ট থেকে আপিল বিভাগে যাওয়া এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করা, পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর শুনানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ইত্যাদি সবই আন্দোলনকে পুঞ্জীভূত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
হাইকোর্টের রায় যখন আপিল বিভাগ স্থগিত করেনি, তখনই কোটা আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। এই সময় সরকারের সামনে সুযোগ ছিলো শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সংকট মিটিয়ে ফেলার। কিন্তু সরকার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলো এবং আত্ম অহংকারের কারণে শিক্ষার্থীদের সাথে কোনও আলোচনায় যায়নি। এরপর যখন আন্দোলন তপ্ত হয় তখন প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য বিকৃত করে শুরু হয় উত্তপ্ত অবস্থা। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিতর্কিত অনভিপ্রেত বক্তব্য পরিস্থিতিকে বিস্ফোরক করে তোলে। শিক্ষার্থীদের দমনের জন্য ছাত্রলীগ যথেষ্ট-এ ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা পরিস্থিতিকে প্রথম সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।
এরপর আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জামায়াত-শিবির এবং বিভিন্ন মহল। তখনই যদি সরকার কিছু বিতর্কিত মন্ত্রী এবং ব্যক্তিকে বাদ দিতো, দায়িত্ব অবহেলার জন্য যদি কয়েকজন মন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতো তাহলে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো না। সেনা মোতায়েনের পর এক সপ্তাহ পরিস্থিতি ভালো ছিলো। এই এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার কোনও কিছুই করেনি। বিশেষ করে যে সমস্ত এইচএসসি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্ত করা, প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের যে প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিলো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির সীমাহীন গাফিলতি লক্ষ্য করা গেছে। আর এই সমস্ত কারণেই এখন এর পরিণতি একদফা।
সুস্পষ্টভাবে একটি মহল সরকার উৎখাতের যে ষড়যন্ত্র চলছিল তার একটি শক্ত সমর্থন দিয়েছে। এখন সরকার কি করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সামনে এখন তিনটি বিকল্প রয়েছে। প্রথম বিকল্প হলো আলাপ-আলোচনার সবাত্নক উদ্যোগ গ্রহণ করা। দরকার হলে তাদের সাথে অনুনয় বিনয় করে সমঝোতার দ্বার খুলে দেওয়া এবং একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ। এই পথটি কঠিন এবং অনেক বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু তারপরও এখনও সুযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় পথ হলো, এই ঘটনার সঙ্গে যারা উস্কানি দাতা, যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নির্মোহ ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা। কোনও কিছু তোয়াক্কা না করে কঠিন পরিস্থিতি সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করা।
তৃতীয়ত বিকল্প হলো জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা। সরকার কি করবে সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে সময় চলে যাচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102