শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তাণ্ডবে

আমলারা কি নিরপেক্ষ হয়ে গেলেন?

বিশেষ প্রতিবেদক
  • খবর আপডেট সময় : রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫৫ এই পর্যন্ত দেখেছেন
কোটা সংস্কার আন্দোলনের তাণ্ডবে আমলাদের ভূমিকা একেবারে নীরব। দু’একজন আমলারা ছাড়া কাউকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশই নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও অনেক আমলার সন্তানরা এখন কোটা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বলেও জানা গেছে।
কোটা আন্দোলনের এক পর্যায়ে সরকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করে, কারফিউ জারি করে। এরপর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দু’জন আমলাকে অত্যন্ত সোচ্চার এবং বলিষ্ঠভাবে ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়ে কথা বলতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন এই এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামাল, যিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। অন্যজন আবু হেনা মোরশেদ জামান, যিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
কিন্তু এই সংকটে যেসমস্ত আমলাদেরকে তৎপর দেখার কথা ছিলো তারা অনেকটাই নীরবে, নিভৃতে সময় কাটিয়েছেন। অনেকটাই তারা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এই সংকটের সময় সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান থাকার কথা ছিলো মন্ত্রিপরিষদ সচিবের। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এখন চুক্তিতে আছেন। আগামী অক্টোবরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর একটি বিবৃতি দেয়া ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে কোন কর্মকাণ্ডেই দৃশ্যমান দেখা যায়নি। বরং তিনি যেন একজন রুটিন আমলার মতো দায়িত্ব পালন করেছেন।
অথচ বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছিলো সেসময় সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনাসমূহ মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরই দেয়ার কথা ছিলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষ থেকে যদি সেনা মোতায়েনের বিবৃতি দেয়া হতো তাহলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। কারফিউ জারি, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। যেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কথা বলা অত্যন্ত জরুরি ছিলো কিন্তু তিনি নীরব ছিলেন।
দূতাবাসসহ বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ-আলোচনার জন্য সদ্য নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবকে দেখা গেছে। গতকালও তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যখন বিদেশি কূটনৈতিকদের ব্রিফ করেছিলেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই সংকটের যে গভীরতা এবং এ সংকটের যে তাৎপর্য তাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দৃশ্যমান ভূমিকা সকলে প্রত্যাশা করেছিলো। অতীতে দেখা গিয়েছিলো যে, এধরনের সংকটগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব দৃশ্যমান হন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলেন।
উল্লেখ্য যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলে আমলারা এ ব্যাপারে সরকারকে নিরুৎসাহিত করেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে এ ধরনের একটি উদ্যোগ কথা সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে বেশ জোরেশোরে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু এতে বাধা দেন আমলারা। এভাবে আলোচনার উদ্য্যোগ নিলে তা সরকারের জন্য অসম্মানজনক হতে পারে বলে আমলারা অভিমত ব্যাপ্ত করেন।
আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯ সালে প্রথম বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলো বিডিআর বিদ্রোহের সময়। এসময় রাজনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবকে একাধিক ব্রিফ করতে দেখা গেছে। করোনাকালীন সময়েও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্তু এবার মুখ্য সচিব যেন পর্দার আড়ালে। তার কোন কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে না। এই সংকটের সময় বেশ কয়েকজন আমলার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কয়েকজন আমলা তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙের ছবি দিয়েছেন। এসমস্ত আমলাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন সচিবের নিষ্ক্রিয়তাও অনেকের চোখে পড়েছে। জনপ্রশাসন সচিব খুব শীঘ্রই মন্ত্রিপরিষদ সচিব হতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন রয়েছেন। সেজন্যই কি তিনি নিরপেক্ষতার চাদরে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। এরকম আরও অনেক সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন যারা সুসময়ে এ সরকারের পক্ষে বিবৃতি দিতে কার্পণ্য করেনি। কিন্তু দুঃসময়ে তাদেরকে নিরব-নিথর দেখা গেছে। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

নিউজ /এমএসএম

দয়া করে খবরটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই ক্যাটাগরিতে আরো যেসব খবর রয়েছে
All rights reserved © UKBDTV.COM
       
themesba-lates1749691102